পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
আফগানিস্থান ভ্রমণ

হয়েছিল? অক্ষরগুলির সংগে পুরাতন পাঞ্জাবী অক্ষরের বেশ সাদৃশ্য ছিল যাকে বর্তমানে বলা হয় “গুরুমুখী” অক্ষর।

 ইচ্ছা হ’ল বইখানা কিনে ফেলি। কিন্তু বইখানার দাম শুনে মনে হ’ল আমি কেন, অনেক ধনীও বইএর দাম শুনে ঘাবড়ে যাবেন। বইখানা দেখাই হ'ল, কিন্তু দুঃখের বিষয় তার কিছুই বোধগম্য হ’ল না। অনেকক্ষণ বইখানা দেখে শেষটায় ফিরে এলাম।

 পুরাতন বই ছিল, পুরাতন ভাষা ছিল। কিন্তু নতুন এসে এক এক ধাক্কা মেরেছে আর পুরাতনকে ভেংগে ফেলে দিয়ে নিজের স্থান করে নিয়েছে। আফগানিস্থান যদিও পুরাতন এবং নতুনের দ্বন্দ্বক্ষেত্র, তবুও এই দেশ আজও পুরাতনকেই আঁকড়ে ধরে আছে।

 স্থানীয় আর্যসমাজীরা নতুন নিয়মে আমাকে অভ্যর্থনা করবার জন্য চেষ্টা করছিল। সনাতনীরা বাধা দিতে গিয়ে বলছিল, তা কি হতে পারে? এতে হয়ত 'পক্ষপাতপূর্ণ’ রাজনীতি এসে যেতে পারে। এখানে পক্ষপাত শব্দটির ব্যবহার দেখে আমায় মনে হ’ল, সনাতনীরা শব্দের ব্যবহার করতে জানে, কিন্তু পক্ষপাত কাকে বলে তাও হয়তো ভাল করে জানে না। আর্যসমাজী এবং শিখরা সনাতনীদের কথায় কান না দিয়ে সভার বন্দোবস্ত করল।

 মহাভারত-রচয়িতা ব্যাসদেব দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করার পর যখন কোন রাজবাড়িতে যেতেন, তখন তাঁকে যেভাবে অভ্যর্থনা করা হত, আমাকেও ঠিক সেরূপভাবেই অভ্যর্থনা করার বন্দোবস্ত হ’ল। যথাসময়ে সভায় উপস্থিত হয়ে সমবেত জনমণ্ডলী কর্তৃক সংবর্ধিত হলাম। আমাকে একখানা বেদীতে বসতে হ’ল। তাতে বসে ঠিক পূর্বকালের কথকদের প্রথামত আমার ভ্রমণ-কথা বলতে আরম্ভ করলাম। সভায় সভাপতি কেউ ছিলেন না। শুধু একজন লোক আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েই ভিড়ের মধ্যে বসে পড়লেন।