যারা গঙ্গার ধারে বসে কথকতা শুনেছেন, তারা দেখে থাকবেন কথকেরা কেমন করে শ্রোতার মন আকর্ষণ করে থাকে। আমি ইচ্ছা করেই সে ভাবেই কথকতা শুরু করেছিলাম। আমার ভ্রমণকাহিনী একদিনে সমাপ্ত হয় নি। আমার ভ্রমণকাহিনী অনেকের ভাল লেগেছিল বলেই বোধ হয় প্রথমদিন কথকতা করে তিনশত কাবুলি মুদ্রা দক্ষিণা পেয়েছিলাম। পরদিনও আবার সভার আয়োজন হয়। দ্বিতীয় দিনও অনেক লোক হয়েছিল। প্রথম দিন যারা কথকতা শুনেছিলেন পরের দিনও তাঁরা সদলবলে উপস্থিত হন এবং দ্বিগুণ দক্ষিণা দিয়ে পূণ্য অর্জন করেন। আমি লক্ষ্য করছিলাম, দক্ষিণা দেবার সময় দাতা তাঁর নিজের সমস্ত শরীরটায় টাকার তোড়াটি বুলিয়ে তোড়া থালাতে ঢেলে দিচ্ছেন। একটি যুবককে এরূপ করে টাকা দেবার কারণ কি জিজ্ঞাসা করলাম। সে বললে, “এদের বিশ্বাস নিজের শরীর বুলিয়ে দেশভ্রমণকারীকে টাকা দিলে দাতার শরীরে কোন রোগ থাকে না এবং দেশভ্রমণকারী এই টাকার সাহায্যে যত দূরে যাবে দাতার বিপদ-আপদও ততদূরে চলে যাবে।” এদের ধারনা বিপদআপদও একধরণের শরীরধারী জীব। এদের কুসংস্কার ও অপরিণত বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে আমার খুব আমোদ হয়েছিল।
এরা তাদের এই সংস্কারকে দৃঢ়ীভূত করার মত একটি হেতুও পেয়ে গেল। আমার ভ্রমণ-বৃত্তান্ত বলার দ্বিতীয় দিনের আসর ভাংগার পর আসামাই মন্দিরের পূজারীর দ্বিতীয় পুত্র তার দোকান হতে সেদিনের বিক্রয়লব্ধ টাকা নিয়ে আসার সময় পথে দেখতে পায় একটি পাঠান বরফে জমে গেছে। লোকটি জ্বালানী কাঠ বিক্রি করতে এসেছিল। পরদিন সেই ঘটনাকে উপলক্ষ করে পূজারী রটিয়ে দিল, ভাগ্যে তার ছেলে দেশভ্রমণকারীকে শরীর বুলিয়ে দশ কাবুলি দিয়েছিল নতুবা পাঠানের ওপর যে ভূত চেপেছিল সেই ভূত তার ছেলের ওপরও চড়াও হয়ে নিশ্চয়ই তাকেও শীতে জমিয়ে মেরে ফেলত। এতে আমার বেশ লাভই হল। যারা আমাকে ইতিপূর্বে