পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
আফগানিস্থান ভ্রমণ

কিছু খাদ্য দেওয়া হ’ত যার দ্বারা মোটেই তার পেট ভরত না। সেজন্য কয়েদীয়া বাইরে যাওয়া আসা করতে পারত।

 মোল্লারা বিদেশীর কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে বেশ মজা লুটছিল। কিন্তু তখন এমন একটি লোকের সন্ধান পাওয়া যায় নি যে আমানউল্লার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পারবে। অবশেষে এক দিন বাচ্চা কোনও মোল্লার বাড়ী হতে রুটি আনার সময় মোল্লার সংগে কথা বলতে আরম্ভ করে এবং আমানউলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে সেরূপ মনোভাবও প্রকাশ করে। বাচ্চ-ই-সিক্কা মোল্লার কাছ থেকে কিছু বৃটিশ স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে জেলের মধ্যে এসেই দল পাকাতে আরম্ভ করে। তখন একটি স্বর্ণমুদ্রার দাম প্রায় পঁচাত্তর আফগানী ছিল। পাঁচাত্তর আফগানী একটি স্বর্ণমুদ্রায় যেখানে পাওয়া যেত সেখানে যদি কারো কাছে একশত স্বর্ণমুদ্রা থাকত। তবে তাকে মস্তবড় একজন ধনী ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? এত টাকা পেয়েও বাচ্চার মাথা খারাপ হ’ল না, তার মনে বড় হবার বাসনার উদ্রেক হল। সে মনে করল ইচ্ছা করলেই রাজা হওয়া যায়। সর্বপ্রথম জেলের মধ্যেই বাচ্চা কাজ আরম্ভ করে দিল—জেলের মধ্যে আরম্ভ হ’ল গোপনে আলোচনা। সেই সময় কয়েকজন হিন্দুও জেলে ছিল। হিন্দুদের কেউ চিনতে পারত না এমন কি হিন্দুরা কেহ হিন্দু বলে পরিচয় দিত না। কোনও পর্যটক বলতে ইচ্ছুক নন। কুকথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। পৃথিবীতে বর্বর যুগ। তখনও ছিল এবং এখনও যে নাই তা বলা চলে না। এখনও এমন অনেক লোক আছে যারা অবতারবাদের অন্ধ বিশ্বাসে নরহত্যা করতে অগ্রসর হয়। এই বর্বরগণ যদি জানত তাদের পূর্ব-পুরুষ কত দুঃখ কষ্টের ভেতর দিয়ে এই পৃথিবীতে মানুষের প্রাধান্য অর্জন করেছেন। তবে অবতারবাদকে ঢেলে ফেলে দিয়ে মানুষের উন্নতিবাদই আকড়িয়ে ধরত।

 একদিন দেখা গেল একটা টিকিধারী লোক আরামে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর কি রক্ষা আছে? অন্যান্য কয়েদীরা সেই লোকটাকে আক্রমণ করল।