পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
আফগানিস্থান ভ্রমণ

মত জল ভর্তি করে ফের চল্লাম। এবারকার পথ বড়ই উঁচু নীচু। পাহাড়ের গা বেয়ে পথ চলেছে। ড্রাইভারের হাত ঠাণ্ডায় আড়ষ্ট হয়ে যাওয়ার দরুণ প্রত্যেক মুহূর্তেই ভাবছিলাম এই বুঝি গাড়ি পথ ছেড়ে নীচের দিকে চলল। সুখের বিষয় সেরূপ কিছুই ঘটে নি। ক্রমাগত পনের মাইল যাবার পর পথের পাশে একখানা পর্ণকুটির দেখতে পেয়ে মোটর দাঁড় করালাম।

 ঘরখানি বড় নয়, মাটির দেওয়াল, উপরে মাটির ছাদ। দরজায় করাঘাত করা মাত্র ঘরের মালিক দরজা খুলে আমাদের বেশ করে দেখে নিলেন। বোধ হয় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমরা সবাই সরকারী লোক। সেজন্যই বোধ হয় তিনি চায়ের বন্দোবস্ত করতে ইতস্তত করছিলেন কিন্তু যখন মোটর ড্রাইভার আমার পরিচয় করিয়ে দিল তখন তিনি ভেতর দিককার একটা কুঠরীর দিকে যেয়ে তাঁর স্ত্রীকে চা এবং খাবার তৈরি করতে আদেশ দিলেন।

 প্রচুর চা, ডিম এবং শুক্‌নো রুটি খেয়ে আমাদের বেশ তৃপ্তি হল। গৃহের মালিককে প্রচুর পরিমাণে সিগারেট এবং চা উপহার দিয়েছিলাম। কুটিরবাসী পাঠান আমার প্রতি কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, “বাংলা দেশ গরম আর এ দেশ ঠাণ্ডা। শীতের সময় এ দেশে ভ্রমণ করা বড়ই কষ্টকর।” ড্রাইভারকে তিনি বার বার এই বলে হুূসিয়ার করে দিলেন যে বাংগালী মুসাফিরকে যেন শীত থেকে বাঁচিয়ে গন্তব্য স্থানে পৌছনো হয়, গজনী পৌঁছবার পূর্বেই যেন ফ্রস্ট্র‌্‌বাইট না হয়। দরিদ্র পর্ণ-কুটিরবাসীর আন্তরিকতা দেখে তার প্রতি আপনা হতেই মনে প্রীতির ভাব জেগে উঠেছিল।

 আমাদের মোটকার ‘মটরে পোস্ত’ হু হু করে এগিয়ে চলল। চা খাবার পর শরীর একটু গরম হয়েছিল কিন্তু নিমিষে তা লোপ পেল। আমি থর থর করে কাঁপতে ছিলাম। কয়েক মাইল পথ যাবার পরই মোটরকারের চাকা বরফে বার বার ডেবে যাচ্ছিল। অতি কষ্টে শাবলের সাহায্যে মোটরের চাকা