শহরের এটাই হল একমাত্র হোটেল। ফ্রেঞ্চ ধরনে পরিচালিত। আমার কাছে কাবুলের প্রধান মন্ত্রী মহাশয়ের চিঠি থাকায় হোটেলের ভাড়া বাবত কিছুই দিতে হয় নি। বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য কয়েকটি মাত্র টাকা খরচ করতে হয়েছিল। খাবার আনবার জন্য হোটেলের বয়কে বাজারে পাঠালাম। ইত্যবসরে আমি জ্যোৎস্নালোকিত গজনী শহরের নয়ন মনোমুগ্ধকর নৈশ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পায়ের গোড়ালিতে এমন ব্যথা বোধ করতেছিলাম যে সৌন্দর্য উপভোগ বেশীক্ষণ করা চল্ল না। পা থেকে জুতাজোড়া পর্যন্ত খুলতে আমার কষ্ট বোধ হচ্ছিল। বয় খাবার নিয়ে ফিরে এলে তাকে পায়ের ব্যথার কথা বললাম। বয় খাবারগুলি টেবিলের ওপর ঢাকা দিয়ে রেখে একখানা ছুরি নিয়ে এল। তারপর সে ছুরির সাহায্য জুতার ফিতাগুলি কেটে খুলে ফেলল। আগের দিন ফ্রস্ট-বাইট-এর কথা শুনেছিলাম। আজ বয় আমাকে শুনাল আমার পায়ে ফ্রস্ট-বাইট হয়েছে। কথাটা শুনামাত্রই পায়ের ব্যথা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। চিন্তা হল হয়তো পা দুখানা চির জীবনের মত কেটেই ফেলতে হবে। ভ্রমণ হয়তো এ জীবনের মত এখানেই শেষ করতে হবে। আমাকে চিন্তিত দেখে বয় বললে, চিন্তা করবার কিছুই নেই। আমি এখনি ঔষধ আনছি। এই কথা বলেই বয় একটা বেসিনে করে খানিকটা ফুটন্ত জল এনে তাতে নুন মিশিয়ে দিল। জলটা যখন একটু ঠাণ্ডা হল তখন সে আমাকে গরম জলে পা ডুবিয়ে রাখতে বলল। গরম জলে পা দুখানা ডুবিয়ে রাখার পর ব্যথা অর্ধেকটা কমে গেল। খাবার খেয়ে ফের জলে পা ডুবিয়ে রাখলাম।
যদিও বয় বেশ ভালভাবেই আমার পরিচর্যা করছিল কিন্তু তার মন ছিল পাপে পরিপূর্ণ। এমন অবস্থাতেও সে আমার কাছে কতকগুলি কুপ্রস্তাব করতে কুণ্ঠা বোধ করে নি। অর্থের অভাবই যে তার একমাত্র কারণ ছিল সে কথা আমি জানতাম।