মন্দিরের চারিদিকে পাহাড়ের আবেষ্টন ছিল। দেখলেই মনে হয় এখারে মন স্থির করবার পক্ষে প্রশস্ত। একদিকে একটি প্রস্রবণ। যদিও প্রস্রবণের জল বরফ হয়েছিল তবুও চারিদিকের পর্বতমালা হতে উষ্ণ জল বরফের নীচ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। শিবলিংগটি আমাদের দেশের শিবলিংগের মত নয়। একটি লম্বা পাথর মাত্র, প্রকৃতপক্ষে মন্দিরটি পাহাড় কেটেই তৈরি করা হয়েছিল। তাতে অন্য পাথরের কোনরূপ সংযোগ ছিল না। এরূপ মন্দির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কি না বলা যায় না। তাজমহলের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে যোগ বিয়োগের নিপুণতায়, কিন্তু এ মন্দির সে পদ্ধতিতে প্রস্তুত নয়। এই মন্দিরের বিশেষত্ব সংযোগ নয় বিয়োগে। অতি কষ্টে মন্দির দেখা শেষ করে গ্রামে ফিরে এলাম। রাত্রে যদিও পায়ের ব্যথা বেড়েছিল, তবুও মুসাফিরখানার পাঠানদের মাসাজে এবং ক্রমাগত গরম জল ব্যবহারে পায়ের অবস্থা বেশ ভালই ছিল।
মুকুর হতে রওয়ানা হয়ে খালাত নামক স্থানে পৌছলাম। এখানে দুদিন বিশ্রাম করি। আমরা যে ঘরটাতে ছিলাম সেখানে একজন পাঞ্জাবী হিন্দুও আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনিও আমার মতই পায়ের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, সেজন্য আফগান ড্রাইভার আমাকে তাঁর পাশেই বিছানা করে দিয়েছিল। ভদ্রলোক বড়ই অমায়ীক। নিজের পায়ের ব্যথা ভুলে গিয়ে আমি যাতে আরাম পাই তারই ব্যবস্থা করতে লাগলেন। তাঁর সঙ্গে দু’জন রুশিয়ান্ ছিলেন। তাঁরাও বোধহয় তাঁরই সহকারী। এই দু’জন রুশদেশীয় ভদ্রলোকের সাহায্য পেয়ে শরীরটাকে সুস্থ রাখতে পেরেছিলাম।
পাঞ্জাবী ভদ্রলোক বলছিলেন তিনি সোভিয়েট প্রজা হয়েছিলেন এবং বর্তমানে আফগানিস্থানে সরকারী কাজেই নিযুক্ত আছেন। আমাদের দেশের লোক সরকারী কাজের নাম শুনলেই মনে করে মস্তবড় একটি দাও অর্থাৎ সুযোগ এবং সুবিধা। রুশিয়ার সরকারী কাজ অথবা সাধারণ কাজ একই ধরণের।