পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ

পরান্মুখ, ভিক্ষাস্বরূপ অল্পস্বল্প পেলেই সন্তুষ্ট। এতে জীবন্মৃত হয়ে টিকে থাকা চলে, কিন্তু উচ্চ চিন্তা কখনই সম্ভব নয়। প্রভূত বাহ্যিক সম্পদ্ না হ’লে সভ্যতার উন্নতি কখনই হবে না, দরিদ্র জাতি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ধ্বংসকে ডেকে আনবে। আমরা ভারতবাসীরাও তাই করছি।

 ইংরেজ যুবকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন উঠলাম, তখন তিনি সবিনয়ে আমার হাতে দশটি টাকা দিয়ে বললেন, পর্যটকের পাথেয়ের জন্যে, এ তাঁর যৎসামান্য সাহায্য, আমি গ্রহণ করলেই তিনি কৃতার্থ হবেন।

 এই ইংরেজ যুবকের ভদ্র ব্যবহারে সেদিন আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। প্রভুত্বের মোহে ইংরেজ তনয়গণ এদেশে অন্ধ, তাদেরই একজন এত বড় উচ্চপদের অধিকারী হয়েও আমার মত ধনমানহীন পরাধীন দেশের অধিবাসীর প্রতি যে আচরণ করলেন, তা অপ্রত্যাশিত।

 যা হোক, এবার আমি ভারতের সীমান্তের দিকে পা বাড়ালাম।

 সীমান্তে একটা কাস্টম হাউস আছে। কাস্টম অফিসার একজন ভারতীয়। তিনি পাঠানদের পাসপোর্টগুলি একরূপ না দেখেই সীলমোহর করলেন। তাঁর কার্যকলাপ দেখে আমি তখন ভাবছিলাম, একটা গোলাম অন্য একটা গোলামকে স্বাধীন দেশে যেতে দেখতেও রাজী নয়; এজন্যই এরূপ বাড়াবাড়িভাবে, আমার পাসপোর্ট পরীক্ষা করছে। অফিসার যখন পাসপোর্ট পরীক্ষা করে সীলমোহর করলেন, তখন আমি তাঁকে বললাম, মনে অনেক আঘাত লেগেছে নিশ্চয়ই আমাকে আটকে রাখতে পারেন নি বলে? দাসসুলভ মনোবৃত্তির এটাই বৈশিষ্ট্য। আপনি অথবা আমি যদি স্বাধীন জাতের লোক হতাম, তবে আমারই পাসপোর্টে সীলমোহর পড়ত সর্বাগ্রে। অফিসার নীরবে অন্য কাজে মন দিলেন।

 সীমান্ত পার হয়ে পার্বত্য উপত্যকার উপর দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম। উত্তরের হাওয়া এসে আমার নাকে মুখে ক্রমাগত ঝাপটা