পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
১৫৫

প্রথায় টুপি পরতে হয়। নিয়মটি বড়ই সুন্দর। এখানে কিন্তু কোন ধর্মের অনুশাসন মেনে চলতে হয় না। প্রত্যেক ছেলেকে বুট-পট্টি লাগিয়ে স্কুলে যেতে হয়। আফগানিস্থানের শিক্ষাবিভাগে জার্মান, তুর্কি এবং আংশিক ভাবে ফ্রেঞ্চ প্রথা প্রচলিত হওয়ায় স্কুলে সাম্প্রদায়িক ভাব মোটেই জাগতে পারে না। উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে হিন্দু ছেলেরাও যায়।

 কান্দাহারে যখন নানা বিষয়ের তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম একদিন সকাল বেলা একটি হিন্দু পথে চীৎকার করে বলে যাচ্ছিল, “এক বাংগালী বন্দী মর গিয়া, শ্মশানমে চলিয়ে।” কথাটা শুনেই ভোলানাথকে জিজ্ঞাসা করলাম “এখানে বাংগালী বন্দী এল কোথা হতে?”

 ভোলানাথ বললেন, যে লোকটি মরেছে সে বাংগালী বলে কোন প্রমাণ নেই, তবে সবাই অনুমান করে লোকটি বাংগালীই হবে নতুবা এরূপভারে মরত না। ভোলানাথ বলছিলেন “দুটি সন্ন্যাসী সীমান্ত পার হয়ে আফগানিস্থানে প্রবেশ করে। প্রচলিত আইন মতে এসব আইন-ভংগকারীদের কয়েকদিন জেলে রেখে আবার চামন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসব লোকের আহারাদির বন্দোবস্ত আমরাই করে থাকি এবং যখনই এরূপ লোকের আগমন সংবাদ আমাদের দেওয়া না হয় তখনই আমরা মনে করি নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। এরূপ অনেক ঘটনা ঘটেছে। তারপর কি হয়ে গেল বলতে পারি না, একদিন সব কয়েদী মিলে এদের দুজনকে খুব এক চোট প্রহার করল। তারই ফলে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই লোকটি মনের দুঃখেই বোধ হয় কোন ঔষধ না খেয়ে শীতের রাত্রে বরফের ওপর শুয়ে থেকে শেষটায় নিমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। যখন লোকটি শীতে বরফের উপর বসে থাকত তখন কয়েকজন প্রহারকারী কয়েদী তাদের অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে ক্ষমা চায়। তাই আমাদের সে সংবাদ দেয়। আমরা তাদের জন্য খাবার পাঠাতে থাকি কিন্তু যাকে বাংগালী বলে সন্দেহ করা হয়েছিল