সে আর কিছু খায় নি। এরই মাঝে এই লোকটিকে আবার প্রহার করবার জন্য যখন কয়েকটা কয়েদী পরামর্শ করছিল, তখন অন্যান্য কয়েদীরা তাতে বাধা দেয় এবং তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে। সবাই বুঝতে পেরেছিল, জেলের বার থেকে অন্য কেহ বাংগালী কয়েদীর জীবননাশের চেষ্টা করছিল।
একদিন স্থানীয় হিন্দুরা যখন আধমরা লোকটির কাছে খাবার নিয়ে রেখেছিল, তখন কোথা হতে একটা কয়েদী এসে খাদ্য কেড়ে নিয়ে যায়। অন্যান্য কয়েদী সেই সংবাদ অবগত হয়ে তাকে শাস্তি দেবার জন্যই অর্ধমৃত লোকটির শুশ্রুষায় তাকে নিযুক্ত করে। তাতে ফল খারাপই হয়েছিল। অর্ধমৃত লোকটি দণ্ডিত কয়েদীকে কাছে দেখলেই অবোধ্য ভাষায় কি গালি দিত এবং হিন্দিতে বলত “তুই আমার সামনা হতে চলে যা, তুই পশু, টাকার গোলাম, তোর মুখ দেখতে ঘৃণা হয় ইত্যাদি।” অন্যান্য কয়েদীরা শেষটায় ঐ কয়েদীকে আর তার কাছে যেতে দিত না। বিনা চিকিৎসায় অনশনে থেকেই লোকটির মৃত্যু হয়েছিল।
সেদিনই আমি বৃটিশ কনসালের নিকট বাংগালী বলে কথিত কয়েদীর মৃত্যুর কথা উত্থাপন করি। কনসাল ছিলেন একজন ভারতীয়। তিনি মৃত লোকটিকে বাংগালী বলে অস্বীকার করেন। তাঁর কথার ওপর আমার কোন তর্কই খাটে না। সেজন্য এ বিষয়ে আর ব্যর্থ চেষ্টা না করে গভর্ণরকে বলে কয়ে অন্য কয়েদীটিকে জেল হতে খালাস করে চামন পাঠিয়ে দিলাম। এই কয়েদীটি সত্যই বাংগালী ছিল কি না কে জানে, তবে কান্দাহারের লোকের ধারণা মৃত লোকটি বাংগালী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। সেই সময়ে অনেক বাংগালী যুবক স্বদেশ হতে বিদেশে যেয়ে শিক্ষার পথ প্রশস্ত করতেন। সেই শিক্ষা বি, এ, এম, এ, পাশ নয়। রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন। বৃটিশ সেই জিনিসটা বুঝতে পেরেছিল এবং তার ফলে কৌশলে বাঙ্গালী এবং পাঞ্জাবী বিপ্লবীদের প্রতি যখনই সন্দেহ হ’ত তখনই হত্যার ব্যবস্থা করত।