পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
১৫৭

 এখানে হিন্দুদের মৃতদেহ সৎকারের বেশ সুন্দর বন্দোবস্ত আছে। স্থানটা সহরের কাছেই। দারওয়ান মুসলমান। সৎকার-স্থানের চারদিকে ফল ও ফুলের বাগান এবং বসবার সুবন্দোবস্ত ও রয়েছে। স্নানের জন্য গরম জলের বড় টব মজুত ছিল। কাঠও অনেক জমা করে রাখা ছিল। সহরের এত কাছেই হিন্দুদের সৎকারের স্থান থাকা সত্বেও স্থানীয় মুসলমানরা কোনরূপ অসন্তোষ প্রকাশ করে না। দারওয়ান শ্মশানভূমির চারদিকের ফলের-বাগান বিক্রি করে বৎসয়ে প্রচুর টাকা পেয়ে থাকে। আমাকে দেখা মাত্র সে ভেবেছিল আমি হয়তো একজন সেপাই হব, তাই প্রবেশ করতে দিতে আপত্তি করছিল। কিন্তু অন্য লোক এসে আমার পরিচয় দেওয়ায় প্রবেশপথ উন্মুক্ত হল।

 কান্দাহার এক আজব সহর। এখানে নানারূপ গুজব দেশ-বিদেশ হতে আমদানি হয়ে নতুন আকৃতি ধারণ করে। আমি আড্ডায় বসে তাই শুনতাম। একদিন একজন হিন্দু ভদ্রলোক বললেন, গুজব বিশ্বাস করে ১৯১৭ সালে তিনি প্রায় দুই লক্ষ রুশদেশীয় কাগজের রুবুল কিনেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন একদিন কাগজের রুবুল বদলি করে সোনা যোগাড় করবেন, কিন্তু দুঃখের সহিত জানালেন এসব কাগজ বর্তমানে দেরাজেই আছে, এক পয়সা দিয়েও তা কেউ কিনবে না। মনের দুঃখে তিনি আমাকে একখানা একশত রুকূলের নোট দিয়েছিলেন।

 আড্ডায় বসে নানারূপ গল্প শুনতাম আর পেয়ালার পর পেয়ালা চা খেতাম। একদিন আড়াতে একটা মজার ঘটনা ঘটল। পূর্বেই বলেছি বাবা ভোলানাথ বতর্মান যুগের লোক। তিনি অতীতকে ভুলতে চান আর বতর্মানকে বরণ করতে চান। একজন ভদ্রলোক এসে বাবা ভোলানাথের পা ছুঁয়ে কি বললেন তার কিছুই আমি বুঝতে পারলাম না। ওদের কথা যখন শেষ হয়ে গেল তখন ভোলানাখ বললেন, কি করব ভাই মাথার মাঝে আক্কেল নেই বললেও চলে। ঐ লোকটিও হিন্দু। সে গোপনে একটি বিধবার প্রতি আসক্ত ছিল।