মারছিল। আমার মন আরও উত্তরে যাবার জন্য উন্মুখ ছিল। কিন্তু যেতে হবে দক্ষিণ-পশ্চিমের পথ ধরে। আরও দু’মাইল যাবার পর এলাম আফগান কাস্টম্ হাউসে। সেখানে পাসপোর্ট শুধু সীলমোহর লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হ’ল। দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রশস্ত পথটা ছেড়ে দিয়ে উত্তরের পথে অগ্রসর হলাম। আমার সামনে নগ্ন উন্নত তরঙ্গায়িত পর্বতমালা ক্রমে উচ্চ হতে উচ্চতর হয়ে আরও উত্তরে গিয়ে কালো মেঘের গায়ে মিশেছিল। সে-দৃশ্য একাকী দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেছিলাম। সে-দৃশ্য আরও দেখবার জন্যে মন চাইছিল, দক্ষিণ দিকে যেতে মোটেই ইচ্ছা হচ্ছিল না। উত্তরের ঢেউ-খেলানো পর্বতমালা যেন আমায় দু’হাত বাড়িয়ে ডাকছিল কিন্তু আমার গন্তব্যপথ আমায় টানছিল দক্ষিণ-পশ্চিমের পথে।
একটা পাথরের উপর বসে ভাবতেছিলাম, এই তো সেই আফগানিস্থান, আফগান জাতের বাসভূমি, যাদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের লোক কত ভ্রান্ত কাহিনী শুনে ভয়ে থর-থর করে কাঁপে। কিন্তু আমাকে তো এখনও কোন পাঠান আক্রমণ করছে না, আমি একাকী, আমার হাতে কোন অস্ত্র নেই। তারপর হঠাৎ চিন্তাধারা বদলে গেল। মনে হ’ল এটাতো বিদেশ নয়, এদেশ আমাদেরই। ঐ তো উত্তর দিক হতে হিমালয়ের শাখা হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। ঐ তো কংকরময় সমতলভূমি, দুম্বা-রক্ষকগণ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের গোলগাল মুখ দেখলেই মনে হয় ককেশাস রক্ত তাদের শরীরে বইছে। যদিও তাদের গায়ের পোস্তিন হতে একটা বিশ্রী গন্ধ বের হয়ে আসছে, তবুও তারা স্বাধীন। স্বাধীনতার গন্ধ এক-একবার মনকে কোন্ সুদূর ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু যখনই মনে হতেছিল আমি বস্তুতপক্ষে পরাধীন দেশের লোক, তখনই কে যেন সজোরে আমাকে আছড়ে ফেলে দিতেছিল কঠিন মাটির ওপর। স্বাধীন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের দেশের পরাধীনতার গ্লানিকে বেশ ভাল করে হৃদয়ংগম করতেছিলাম।