পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
১৭১

চলতে চায়। আফগানিস্থানের অন্যান্য অঞ্চলের মত হিরাতে এখনও চোরের হাত কেটে দেওয়া হয়। এতে বোঝা যায় ধর্মকে ছেঁটে ফেললেও নৈতিক আদর্শ এখনো সেখানকার সমাজে অমর্যাদা লাভ করে নি। যে দেশের লোক ধর্মাচরণ করে না অর্থাৎ লোক শাস্ত্রের ছক-কাটা গোলকধাঁধায় কলুর বলদের মত শুধু অভ্যাসবশেই ঘুরে বেড়ায় না, অনেকের মতে সে দেশ ঘোর অধপতিত, সেখানকার লোকের বাস্তবজ্ঞান নাই। কিন্তু জগতে ধর্মানুসারণকারী জাতিমাত্রেই নৈতিক উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে এমন কথা অতি বড় ধর্মধ্বজীও বলতে পারবেন না। প্রকৃত মনুষ্যত্বের মাপকাঠি যে সব গুণ তার বিকাশ ধর্মমানা-না-মানার ওপর নির্ভর করে না। স্বাধীন ভাবে যারা চিন্তা করতে শিখেছে তারা ধর্মের খোলস নিয়ে আর সময় নষ্ট করতে রাজি নয়।

 এত দিন থাকার পরও হিরাতের বাজার দেখতে যাইনি। একদিন বাজার দেখতে গেলাম। বাজারের গঠন দেখে মনে হল যেন ত্রিপুরা স্টেটের আগরতলায় এসেছি। আগরতলার ব্যবসায়ের স্থানের সংগে হিরাতের বাজারে গঠন অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

 বাজারে গিয়ে দেখলাম সেখানে জাপানী মালে বাজার একবারে ছেয়ে আছে। হিরাতবাসী ব্যবসায়ীরা বেলুচিস্থানের ভেতর দিয়ে নিয়ে এসে সেই মাল সস্তায় বিক্রি করছে। একটি দোকানে দেখলাম ভারতীয় সিগারেট বিক্রি হতে। এক পেকেট সিগারেট কিনে ইয়াকুবকে বললাম, দেখলেন এটাকেই বলে নেশনেলিজম্ বা স্বদেশিয়ানা। ভারতে হয়তো সিগারেটের পেকেটটি মাত্র তৈরী হয়েছে, তবু আমার মন আপনা থেকেই ‘ভারতে প্রস্তুত’ জিনিসটির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। সেজন্য বলি, স্বদেশে তৈরী জিনিস দেখলেই যে ভাবে গদগদ হতে হবে তার হেতু নেই। আমরা দেখি জিনিসের প্রকৃত নির্মাতা যারা তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেল কি না। যদি শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি না পেয়ে থাকে, তবে সে জিনিস দেশের হলেও অস্পৃশ্য এবং অস্পৃশ্য জিনিস সর্বথা পরিত্যজ্য।