পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
আফগানিস্থান ভ্রমণ

আমি কোন্ ধর্মের লোক জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁকে বললাম-এইমাত্র জেনে রাখুন আমি মুসলমান নই। মুসলমান নই শুনে তিনি একটুও দ্বিধাবোধ করলেন না। তাড়াতাড়ি করে মসজিদের এক কোণে একটি লম্বা তাকিয়া, ছোট তোশক এবং কম্বলসমেত একটি লেপ এনে দিলেন, আর আমাকে বাইরে রুটির দোকানে খেয়ে আসতে বললেন। তাঁর নির্দেশমত আমি রুটির দোকানে যেয়ে ঢুকলাম। তারপর আমি যখন গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত ছিলাম, তখন মোল্লা আমাকে জাগালেন এবং বললেন, এখন আর রাত নেই, আজান করা হবে। আপনি হয়ত ঘুমের মাঝে হঠাৎ ভয় খেয়ে যাবেন, সেজন্যই ডেকে দিলাম।

 একবার ঘুম ভেংগে যাবার পর আর ঘুমাতে ইচ্ছা করে না। উঠে বসলাম এবং একটা সিগারেট ধরিয়ে নানা কথা ভাবতে আরম্ভ করলাম। হিন্দুস্থানের মুসলমানদের মতে আমি কাফের, আমাকে কলমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা তাদের পক্ষে একটা বিশেষ পুণ্যের কাজ; কিন্তু এখানে দেখছি তার বিপরীত। এখানে লোকের সাধারণ বুদ্ধি আছে বলেই মোল্লা আমাকে ডেকে উঠিয়েছিলেন। সাধারণ বুদ্ধি সহজে আসে না। সাধারণ বুদ্ধির বিকাশ হয় ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে। যে দেশ এবং যে জাতি স্বাধীন, তাদের জীবন ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর দিয়েই কাটে।

 পূর্বদিকে মাথা রেখে শুয়েছিলাম। মোল্লা সেজন্য প্রতিবাদ করেননি। এমন কি কেউ ভ্রূক্ষেপও করেনি। পরদিন প্রাতে বিদায়ের সময় মোল্লা বলেছিলেন, আপনার অনেক অসুবিধা হয়েছে নিশ্চয়ই, সেজন্য ক্ষমা করবেন। দুঃখের বিষয়, আমাদের গ্রামে মুসাফিরখানা নেই।

 মোল্লাকে আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে পথে বেরিয়ে পড়লাম। বেশী কথা বলবার সময় ছিল না। তখন স্বদেশের কথা চিন্তা করছিলাম। ভাবছিলাম স্বাধীনতার কত গুণ। পরাধীন ভারতের জাতিভেদের বিরুদ্ধে আমার হৃদয় বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। পরাধীন ভারতের মুসলমানরা বর্ণহিন্দুদের গোঁড়ামি