পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
আফগানিস্থান ভ্রমণ

নেকড়ের দল বুলডগ্ খেয়ে ফেলে। যদি কোনও একটি ফিরে আসে, তবে খালি মুখে সে ফিরে আসে না, নিহত নেকড়েকেও জয়ের চিহ্নস্বরূপ মুখে করে নিয়ে আসে।

 বুলডগের সামনে যখন পাথরের মত দাঁড়িয়েছিলাম, তখন একজন লোক সম্ভবত আমাকে বিপন্ন ভেবেই বুলডগ্‌টার দিকে তেড়ে এলেন। কাছে এসেই বুলডগ্‌টাকে এমন এক চপেটাঘাত করলেন। আঘাত পেয়ে কুকুরটা একটু দূরে দাঁড়াল। ভদ্রলোক প্রৌঢ়, জাতে খিলজাই। তাঁর দেহ দীর্ঘ, বুক উচু, মাথায় লম্বা চুল, দাড়ি কামানো। বিশুদ্ধ হিন্দুস্থানীতে তিনি বললেন,—এভাবেই বুলডগের হাত হতে বাঁচতে হয়। আপনি কে এবং যাবেন কোথায়? আমি বললাম, “আমি একজন বাঙালী, বেরিয়েছি পৃথিবী ভ্রমণ করতে।”

 আফগানিস্থানকে সকল সময়ই ভারতেরই একটি অংশ বলে মনে করেছি। সেজন্যই আফগানিস্থানে ইণ্ডিয়ান অথবা অন্য কোন প্রচলিত শব্দে নিজের পরিচয় দেই নি।

 আফগানিস্থানে উর্দু ভাষার প্রচলন শুধু হিন্দুদের মাঝেই আবদ্ধ, কিন্তু অন্যান্যরা হিন্দুস্থানীই জানে এবং উর্দু মোটেই পছন্দ করে না। নমুনাস্বরূপ দু’একটি কথা বলতে পারি। মুসলমানরা বলে—তোমারা নাম কিয়া হায়? তুম কিদার যাওগে? ‘তোমারা কাম বন্ যায়েগা। হিন্দুরা বলে,—ইসমে সরীফ? আপকা দৈলতখানা? আপ কামইয়াব হো যাওগে। আফগানিস্থানে হিন্দুস্থানী এবং উর্দুর স্রোত ভারত হতে যায়নি, ইরান হতে এসেছে।

 ইরান এবং আফগানিস্থানের মধ্যে সীমানা নিয়ে ঝগড়া হয়; সেজন্যই পাঠানরা ইরানী শব্দ ব্যবহার পছন্দ করে না, তারা চায় পোস্ত শব্দ ব্যবহার করতে। দুঃখের বিষয়, ইরানে গিয়ে দেখলাম ইরানী ভাষা হতে আরবী শব্দের ব্যবহার পরিত্যাগ আরম্ভ হয়েছে। ফলে ইরানে এবং আফগানিস্থানে ফ্রেঞ্চ, ইংলিশ, জার্মান এবং পুরাতন ভাষার ব্যবহার আরম্ভ হয়েছে।