পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
আফগানিস্থান ভ্রমণ

তারপর ভিতর-বাড়ী হতে যা নিয়ে এলেন দেখে জিহ্বা হতে সহস্র ধারায় জল বের হয়ে আসছিল। কি সুন্দর মোলায়েম ভাত এবং তার পাশেই বড় বড় করে দুম্বার কাবাব। পাঠান বাইরে ছিলেন, তিনি এসেই হাত ভাল করে ধুলেন। হাত ভাল করে ধোওয়া হয় মাটির সাহায্যে। এখনও আফগানিস্থানের সর্বত্র সাবানের প্রচলন হয়নি, এখনও আফগান জাত প্রকৃতির অনুগত; সেজন্যই মাটির সাহায্যেই তারা হাত পরিষ্কার করে। সাবান কখন যে মাটিকে বেদখল করবে, পাঠানদের উপরই তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে।

 ক্ষুধার সময় উত্তম খাদ্য পেলে লোকে আকণ্ঠ আহার করে। আমিও তাই করলাম। আহার সমাপ্ত হওয়ার পর পাঠান দেশ-বিদেশের গল্প শোনার জন্য গ্রামের লোকদের ডেকে আনলেন। দেখে আশ্চর্য হলাম, সেই গ্রামে একজন বাঙালীও ঘরবাড়ী বেঁধে স্থায়িভাবে বসবাস করছিলেন। এই ভদ্রলোক ঘরের এক কোণে বসেছিলেন এবং আমাদের দেশের অনেক খুঁটিনাটি প্রশ্ন করতেছিলেন। তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে আমায় রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছিল। শেষটায় উপায়ান্তর না দেখে নিজের ভাষায় বললাম,—যদিও আপনার পরনে কাবুলি পোশাক, পোস্ত ভাষায় অনর্গল কথা বলছেন কিন্তু আপনি আমাকে যে সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত অভিজ্ঞতা আমার নেই। আমি কলিকাতার বাসিন্দা অথবা একসঙ্গে দু’মাসও কলিকাতায় থাকিনি। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি অথবা বিপিন পাল মহাশয়ের দর্শন পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তারপর অন্যান্য যে সকল বিপ্লবী-নেতার নাম করলেন তাঁদের নামও শুনতে পাইনি। আমি পাড়াগাঁয়ের লোক। ছিট্‌কে এসে পড়ি একেবারে বেলুচিস্থানে। পল্টনের কেরানীর কাজ করার পর যে সময় পেতাম, সেই সময়ে অন্যান্য শিক্ষণীয় বিষয় নিয়েই সময় কাটাতাম। পল্টনের কাজ শেষ হলে চলে যাই সিঙ্গাপুরে, সেখান থেকেই আমার ভ্রমণ আরম্ভ হয়েছে।

 অন্যান্য লোকের সংগে কথা শেষ করে তাঁর সংগেই পুনরায় কথা বলতে