অনুমান করলাম, তুষারপাত শুরু হতে দু’সপ্তাহ লাগবে। এরূপ আবহাওয়া সাইকেলে ভ্রমণের পক্ষে বেশ সুবিধাজনক। প্রবল বাতাসের সংগেই তুষারপাত শুরু হয়।
সাইকেলটা বাইরে এনে পাঠান এবং তাঁর জায়গীরদারের সংগে করমর্দন করে রওনা হলাম। পথে এসে বুঝলাম পথটা ক্রমেই উঁচু হয়ে চলেছে। একেবারে বেশী দূর যেতে সক্ষম হলাম না। বার বার নামতে হচ্ছিল। যখনই নেমেছি তখনই দূরের পাহাড়ের দিকে চেয়ে তার দৃশ্য দেখছি। সে-সব দৃশ্য চিরদিন আমার মনে আঁকা থাকবে। এই পর্বতমালা আফগানিস্থান হতে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে হিমালয় হতে, এবং শেষ হয়েছে ককেশাসে। পার্বত্য জাতির অনেক স্ত্রী-পুরুষকে নির্ভীক স্বাধীনভাবে পাহাড়িয়া পথে বিচরণ করতে দেখলাম। স্বাধীনভাবে ভ্রমণকারীদের দু’-একজনের সংগে আলাপ হয়েছিল। তাদের কাহিনী শুনে মনে হচ্ছিল, ভ্রমণে যদি রোমাঞ্চ থাকে তবে ভ্রমণেই আছে কত বিচিত্র সে অভিজ্ঞতা। যা’ হোক, বড় পথ দিয়ে চলেছি। ডাকাত আমার মত লোকেরও যদি পিছু নেয়, তবে সে-ডাকাত ডাকাতই নয়—সে চোর অথবা ছেঁচড়। চোর ছেঁচড়ের ভয়ে যারা ভীত, রোমাঞ্চ অনুভব করবার ক্ষমতা তাদের থাকে না।
আমার পূর্বোক্ত আশ্রয়দাতা পাঠান যা বলেছিলেন তাই সত্য হ’ল। বিকালেও কোন গ্রামের চিহ্নও দেখলাম না, জালালাবাদ আরও কতদূর—কে জানে। চিন্তিত হয়ে পড়লাম। যদি তুষারপাত আরম্ভ হয়, তবে বাইরে থাকা ভয়ানক কষ্টকর হবে। একবার চীনদেশে তুষারপাতের সময় বাইরে ছিলাম। নানারূপ গাছ-গাছড়া থাকায় সেখানে অনেকটা সুবিধা পেয়েছিলাম, কিন্তু এখানে একটি গাছও নেই। অদূরে হয়ত গাছ আছে এই ভেবে তাড়াতাড়ি চলতেছিলাম। একটু দূরে একটা পাহাড়ের উপর উঠে দেখি নিকটেই কতকগুলি গাছ। বাড়ীঘর দেখতে না পেলেও গাছ দেখেই মনে শান্তি এল, শরীরে শক্তি এল।