পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
২৫

 এই বৃক্ষরাজি জালালাবাদের না হোক, অন্তত যে-কোন লোকালয়ের অস্তিত্বের সন্ধান দিচ্ছিল। যতই কাছে যাচ্ছিলাম ততই দু’-একখানা করে ঘর দৃষ্টিপথে আসতেছিল। একজন পথিকের কাছে শুনলাম, জালালাবাদ শহরের কাছে এসে পৌঁছেছি। প্রবল বেগে সাইকেল চালিয়ে শহরে পৌঁছলাম।

 শহর শ্রীহীন। লোকজন নেই বললেই চলে। শহরের সামনেই একটি চত্বর। চত্বরটির চারদিকে পাইন বৃক্ষ সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। দু’টি গাছ এতই সুন্দর যে, দেখলেই পাঠানদের সৌন্দর্য-জ্ঞান আছে মনে হয়। গাছ দু’টি সুন্দর ডালপাতায় সমৃদ্ধ হয়ে ক্রমেই আকাশের দিকে উঠছিল। চত্বরের চারদিকে চেয়ে দেখলাম, ছোট ছোট নালা দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। জল স্বচ্ছ। স্বচ্ছ জলে মাছ খেলছে, কাউকে ভয় করছে না। মাছ দেখামাত্রই বাঙালীর জন্মগত সংস্কার মাথাঝাড়া দিয়ে উঠল। ইচ্ছা হ’ল মাছ ধরি, কিন্তু মাছ ধরার সরঞ্জাম কোথায়? সুতরাং মাছ দেখেই সুখী হলাম, মাছ ধরে খাওয়ার বাসনাকে দমন করতে হ’ল।

 গাছ এবং মাছের প্রতি আমার খরদৃষ্টি দেখে একজন যুবক আমার কাছে এল। যুবকের পরনে ইউরোপীয় পোশাক। নেকটাইটি বেশ ভালভাবেই আঁটা, মাথায় বোখারার গরম ফেজ। এরূপ ফেজ রুশ দেশে এখনও প্রচলিত আছে। যুবক এসেই আমার জাতি, ধর্ম, নাম, ব্যাবসা ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করল। তার সম্বন্ধে আমি কোন কৌতূহল প্রকাশ করি নি। এটা আমার অভ্যাস। যুবককে নিয়ে নিকটস্থ একটা চায়ের দোকানে গেলাম। বলা বাহুল্য, চায়ের দোকানে টেবিল চেয়ার ছিল না। কার্পেট বিছানো ছিল। দলে দলে লোক কার্পেটের ওপর গোল হয়ে বসে চা খাচ্ছিল। নানা ভাষাভাষী লোকের সমাগম দেখলাম। তবে পোশাক তাদের সকলেরই এক রকমের। আমাদের প্রবেশ করতে দেখে কেউ কিছু বললে না। বিদেশী লোক দেখা তাদের