পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
আফগানিস্থান ভ্রমণ

অভ্যাস আছে এবং তারা ভাল করেই জানে কোন্ বৈদেশিক কি মতলব হাসিল করবার জন্য তাদের দেশে আসে। ইতালীয়, জার্মানী, জাপানী এবং বৃটিশরাই আফগানিস্থানে বেশীর ভাগ যায়। রুশরা অতি অল্পই আসে, এবং এলেও তারা জালালাবাদের মত শহরে থাকে না।

 দু’ পেয়ালা চা নিঃশেষ করে তৃতীয় পেয়ালায় যখন চুমুক দিচ্ছিলাম, তখন আরও কয়েকজন লোক চায়ের দোকানে প্রবেশ করল। তাদের মাথায় মাশাদী কাপড়ের পাগ্‌ড়ী, পরনে পায়জামা, সার্ট এবং ইংলিশ কোট। দেখেই মনে হ’ল এরা ছাত্র। আমার প্রথম পরিচিত লোকটির সংগে তারা করমর্দন করল, তারপর কাছে বসে ইরানী ভাষায় কথা বলতে আরম্ভ করল। এখানে ইরানী ভাষায় কথা বলা আভিজাত্যের লক্ষণ। এদিকে ছাত্র-সমাজে এখনও ফরাসী ভাষার প্রচলন রয়েছে। দু’-একজন দেখা যায় যারা পোস্ত এবং হিন্দুস্থানীই বলে বেশী। হিন্দুস্থানীয় অপর নাম উর্দু। উর্দু শব্দের মানে মিশ্রিত। মিশ্রিত ভাষার প্রচলন এখানে বেশ আছে। আমিও মিশ্র ভাষাতেই কথা বলছিলাম। তবে লক্ষ্ণৌয়ে যে মিশ্র ভাষা ব্যবহার হয় এখানে তার প্রচলন নাই।

 ইউরোপীয় পোশাক পরিহিত যুবকটি ধর্মে হিন্দু। হিন্দুরা চার ভাগে বিভক্ত—সনাতনী, আর্যসমাজী, নানকপন্থী এবং শিখ। শিখ এবং নানকপন্থীদের মধ্যে প্রভেদ আচার-ব্যবহারেই—ধর্মের দিক দিয়ে কোন প্রভেদ নেই। নানকপন্থীরা দাড়ি-গোঁফ, হাতে লোহার বালা এবং নেংটি ও কৃপাণ ব্যবহার করে না। শিখরা ধূমপান করে না, কিন্তু তারা সেটি-ও করে। আফগানিস্থানে আর্যসমাজীরা অপ্রকাশ্যেই থাকতে ভালবাসেন, সেজন্য তাঁদের প্রকাশ্যে কোন শ্রেণী নেই—তাঁরা সনাতনীদেরই অন্তর্ভুক্ত। ভেতরে ভেতরে কিন্তু সনাতনী এবং আর্যসমাজীদের মধ্যে এত বিবাদ যে, আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেও তত বিবাদ নেই। এই বিবাদের একমাত্র কারণ হ’ল, আর্যসমাজীরা জাতিভেদ মানে না এবং বিধবা বিবাহ করে। বিধবা-বিবাহ এমনিভাবে প্রচলিত যে, তিন-চার সন্তানের