পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
আফগানিস্থান ভ্রমণ

 সুখের বিষয়, ছাত্রেরা কখনও জিজ্ঞাসা করেনি, ক’টা বাঘ একসংগে আমাকে আক্রমণ করেছিল; ডাকাতের দল পথে ওৎ পেতে বসে রয়েছিল কিনা? তারা জিজ্ঞাসা করেছিল চীন দেশের ছাত্রদের কথা; জাপানীরা কি সত্যিই হারিকিরি করে নিজের সম্মান, দেশের এবং রাজার সম্মান বাঁচাবার জন্যে? নতুন ধরনের নতুন প্রশ্ন। জন্মের পর হতেই এরা শুনছে রাষ্ট্র-বিপ্লবের কথা। এরাও মহৎ উদ্দেশ্যে মরণকে বরণ করতে পশ্চাৎপদ হয় না। বাঘের কথা, ডাকাতের কথার মত তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করার মনোবৃত্তি তাদের ছিল না। জাপানীরা কেন হারিকিরি করে, সে বিষয়েই চিন্তা করছিল। যখন শুন্‌ল হারিকিরি হ’ল এক প্রকার পাগলামি, তখন তারা শান্ত হ’ল।

 ভ্রমণ-কথা কিছুটা বলার পরই স্থানীয় হিন্দুদের কথা উত্থাপন করলাম। একজন বললে, এরা আজব লোক। সকল সময়ই এদের পরমার্থিক চিন্তা এবং কি করে গ্রামকে গ্রাম করায়ত্ত করা যায় তারই চেষ্টা। এরা কখনও কূটনীতিতে যোগ দেয় না, যখনই যিনি রাজা হন তাঁরই আনুগত্য স্বীকার করে। গতানুগতিক অবস্থার ব্যতিক্রম ভাবতেও পারে না। সরকারী বেঙ্কের অর্ধেক অংশ হিন্দুদেরই। যত জমি দেখতে পাবেন, সবটারই মালিকানা স্বত্ব তাদের, অথচ তারা নিরীহ এবং সকলকেই ভয় করে চলে।

 আমাদের দেশের নবাব সিরাজের কথা এখনও লোকে বলে; এমন লোকও আছে যারা সিরাজের জন্য চোখের জলও ফেলে। তারপর যারা আরও একটু উচ্চস্তরের, তারা পঞ্চ ব্রাহ্মণ, লক্ষ্মণ সেন, বল্লাল সেন—এদের কথা বলে আসর গরম করে তোলে। আমার জন্ম ও শিক্ষা-দীক্ষা সেই সমাজেই। সামাজিক দোষগুণ হতে তখনও রেহাই পাই নি। সেজন্যই বোধ হয় রাজা আমানউল্লার কথা এদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে বড়ই ইচ্ছা হয়েছিল; কিন্তু এরা কোন রাজার কথা একবারও বললে না। এদের রাজভক্তি এবং প্রজাসুলভ বশ্যতার ভাব নেই, এরা নিজেরাই যেন এক-একজন রাজা। অথচ যখনই কোন স্বদেশবাসীর সংগে