পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২

তাড়াতাড়ি করে কাজি গৃহে ফেরলেন এবং এক মাস আরক খেয়ে গোঁফে তা দিয়ে বললেন, কি আরাম!

 গরীব লোকের কাছে আরকের অপর নাম সরাব এবং ধনী লোক যখন সরাব গলাধঃকরণ করেন, তখন তার নাম হয় আরক। মামুদ যদি সেই সংবাদটি রাখত, তবে তার এই বিপদ হ’ত না।

 মামুদ এবং আমিনা একই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের লোক দুই শ্রেণীতে বিভক্ত-মোগল এবং পাঠান। পাঠান সংখ্যায় কম, আর মোগল সংখ্যায় বেশী। মোগল শিয়া, পাঠান সুন্নি। উভয় শ্রেণীর লোকই দরিদ্র কিন্তু তা বলে কিছুই আসে-যায় না। মোগলের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে আনা পাঠানরা কখনই বরদাস্ত করত না। মোগল মিশ্রজাত, আর পাঠান আর্য এবং সম্মানিত। মোগল কৃষক, পাঠান ব্যবসায়ী। মোগল রাজত্ব করেছিল, পাঠান পরাজিত হয়েছিল। যুগযুগান্তের ইতিহাস পাঠান ভুলে নি, মোগল ভুলে গিয়েছিল। গ্রামে মোগলরা এক পাড়াতে বাস করত এবং অন্য পাড়াতে বাস করত পাঠান। মধ্যস্থলে একটি ছোট্ট নালা। একেবেঁকে কোনও মরুভূমিতে মিশে গিয়েছিল। এই নালাটি উপলক্ষ্য করে কত নরহত্যা হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। কত কারবালা গড়ে উঠেছিল। এই নালার তীরে তার স্থিরতা ছিল না, কিন্তু মোগল শাসনকর্তা এ-সব পছন্দ করতেন না বলেই কারবালার সৃষ্টি হয় নি।

 পাঠানের মেয়েরা পর্দানশীল, মোগলের মেয়ের স্বাধীন। তারা মাঠে-ঘাটে বেড়ায়। আমিনাও বেড়াত, লোকের সংগে কথা বলত, অনুর্বর জমিতে যে সকল তৃণলতা শুকিয়ে থাকত, কুড়িয়ে নিয়ে আসত। সময়মত আরবী এবং পারসী পদ্য মুখস্থ করত। তারপর একদিন আমিনা আরবী ভাষা শিক্ষা করার জন্য মৌলবী সাহেবের কাছে উপস্থিত হল। বর্ণ-পরিচয় হওয়ার পর মৌলবী সাহেব আমিনাকে আরবী ভাষায় কয়েকটি শব্দ লিখে দিলেন মুখস্থ করার জন্য।