পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩

আমিনা আরবী ভাষা শিখবে না জানিয়ে দিয়ে মৌলবীকে বললে “আমি যে সকল অক্ষর শিখেছি তা দিয়ে কি মাতৃ-ভাষার কথা লেখা যায় না?

 মৌলবী সাহেব তা অবাক হলেন, কেন সে মাতৃ-ভাষা শিখবে, সেই প্রশ্নটাই উঠল বড় হয়ে। অবশেষে মৌলবী সাহেব বললেন “আরবী শব্দ না শিখলে মরবার পর যখন পাপ পুণ্যের বিচার হবে তখন কোন্‌ ভাষায় আল্লার সংগে কথা বলবে?”

 মৌলবীর কথা ধ্রুব সত্য গণ্য করে আমিনা আরবী শিক্ষায় মন সন্নিবেশ করল, কিন্তু মাতৃ-ভাষার প্রতি তার যে দরদ ছিল, সে দরদ একটুও না কমে ক্রমেই বেড়ে চলল। আমিনা মেধাবী মেয়ে, কয়েক মাসের মধ্যেই কোরান কণ্ঠস্থ করে ফেলল। কোরান পর্যন্তই মেয়েদের পড়বার অধিকার ছিল। মৌলবী সাহেব মেয়ের প্রতিভা দেখে ভীত হলেন এবং তাড়াতাড়ি তাকে মাদ্রাসা হতে বিদায় দিলেন।

 ঘরে বসে আমিনা আরবী অক্ষরের সাহায্যেই মাতৃ-ভাষাতে চিঠি লিখতে আরম্ভ করল। মামুদ ছিল পাশের বাড়িতে দরজি। আমিনা দরজিদের চরিত্র বর্ণনা করে পদ্য লিখল। যে সকল দোষ আরোপ করে যুবক দরজিদের বিরুদ্ধে পদ্য লিখেছিল সেই দোষ হতে তখনও মামুদ বহু দূরে ছিল, কিন্তু দোষটির স্বরূপ সে জানত এবং সেই দোষে যদি দোষী হতে হয়। সেজন্যও প্রস্তুত ছিল। আমিনার মত একগুঁয়ে সে ছিল না। মোগল-প্রকৃতি তার ছিল না, ছিল পাঠানপ্রকৃতি। সব কিছু হতে উত্তীর্ণ হওয়াই হল পাঠানদের অভ্যাস। পাঠান সহনশীল, মোগল বিদ্রোহী। কিছুই সহ্য করতে রাজি নয়।

 আমিনার সংগে মুরাদের পত্রালাপ আরম্ভ হল। সময় কেটে কেটে যাচ্ছিল। আমিনার মনে কি এক বিদ্রোহ ভাব জেগে উঠল। সে সামাজিক নিয়ম মানতে পারছিল না। পাড়ার লোক অস্থির হয়ে উঠছিল। বিয়ের পাত্র পাওয়া যাচ্ছিল না, এমন দুর্দান্ত মেয়েকে কে বিয়ে করবে? আমিনার বাবা এক দিন রাগ করে