পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্তান ভ্রমণ
৩৫

করেছিল। মেষ, কুকুর, ঘোড়া, গর্দভ, মানুষ যা’ সামনে পেল তাই খেয়েই ক্ষুধার নিবৃত্তি করতেছিল।

 আমিনার দরজা সাধারণ ওক কাঠের। একটি নেকড়ে লাফ দিয়ে দরজাতে পড়তেই দরজাটি চুরমার হয়ে গেল। আমিনাও নেকড়ের উদারস্থ হল, পড়ে রইল শুধু তার ক’খানা হাড়, আর তারই পাশে পড়ে রইল ছিন্ন কোরান।

 ক্রমে তুষারপাত শেষ হল। গাছপালা সজীব ও সতেজ হয়ে উঠল, প্রান্তর প্লাবিত করে সূর্যকিরণ ঝলমল করে উঠল। কিন্তু দেখা গেল, পথে ঘাটে মাঠে ছড়িয়ে আছে মানুষের আর নানা জীবজন্তুর হাড়। সুর্যকিরণে হাড়গুলি চকচক করছিল; একদিন যে এই হাড়গুলিতে প্রাণের স্পন্দন ছিল, উজ্জ্বল সূর্যকিরণমালা যেন তারই আভাস প্রদান করছিল।

 যে সকল লোক অভুক্ত, রোগজীর্ণ, গৃহহীন তারাই ছিল বাইরে। তারাই হয় বরফে জমে মরেছিল নয় নেকড়ের উদরস্থ হয়েছিল। তাদেরই হাড় পড়ে রয়েছিল। এদের স্বর্গবাসের ব্যবস্থার জন্য মোল্লার দল বের হয়েছিল। যাকে যেখানে পেয়েছিল সেখানেই কবর দিয়েছিল। কেউ বললে, মৃত ব্যক্তিরা ছিল কামনার দাস; তাদের কামনা শেষ হয়েছে সেজন্যই এরা মরেছিল।

 মুক্ত দরজা দিয়ে আলো এসে আমিনার হাড়ের উপর ঠিকরে পড়ছিল—হাড়গুলি উজ্জ্বল সুর্যকিরণে হাসছিল। মোল্লারা যখন আমিনার ঘরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন আমিনার হাড় উপহাস করে যেন বলছিল, আর তোমাদের সাহায্যের দরকার নেই, আশার নিবৃত্তি এবার হয়েছে। মোল্লার দল ইতস্তত করছিল। আমিনাকে কবর দেবে কি না। একজন বলছিল “হাজার হোক ইসলাম ত ছিল, কবর দেওয়াই দরকার।”

 ঘরে প্রবেশ করে মোল্লারা দেখলে ছিন্ন কোরানের পাতাগুলি বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে, তখন আর তাদের সাহস হল না আমিনাকে কবর দিতে। পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা যে করে, তার আবার করব কি! জাহান্নামই তার উপযুক্ত