পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



আফগানিস্থান ভ্রমণ
৪১

আমার মোটেই ভাল লাগল না। পাঠানের দেশে এসেছি পাঠানের মত শক্তিমান কথা শুনতে চাই। পাঠানরা কখনও বেঁচে আছি মাত্র, কোনরূপে দিন কেটে যাচ্ছে, এসব কথা বলে না। তারা বলে—ভাল আছি, দেহে শক্তি আছে, মন খুশী আছে।

 কথার মোড় ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম “হিন্দুদের নাকি গ্রাম হতে সরিয়ে এনে শহরবাসী করা হয়েছে, তার কারণ কিছু বলতে পার?”

 একজন বললে, “কারণ তো কিছুই জানি না, তবে এই মাত্র জানি, এটা সরকারী আদেশ এবং তা মেনে চলাই আমাদের ধর্ম। সেজন্যই পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে এসেছি।”

 সংগের পাঠানটি বললে, “এরা কি কারণে শহরবাসী হয়েছে, তা এদের মুখে শুনতে পাবেন না। আমি বলছি শুনুন। যে সকল গ্রামে এখনও হিন্দুর বাস আছে এবং পূর্বে যে সকল গ্রামে হিন্দুর বাস ছিল, তাদের কাছে সবাই টাকা ধার করে। টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে পারে না। সেজন্য চাষাদের জমি মহাজনদের মালিকানা স্বত্ত্বে পরিণত হয়। হিন্দুদের হাতে জমি চলে গেলে কোনরূপ ক্ষতি হত না যদি হিন্দুরা নিজে জমি চাষ করত, কিন্তু জমি চাষ করে মুসলমানরা। মুসলমানরা সাধারণত একগুঁয়ে এবং জেদী হয়। অপরের জমি চাষ করে অর্ধেকটা ফসল দিয়ে দেওয়া তাদের ধাতে সহ্য হয় না। এদিকে আইনও অমান্য করতে পারে না। সেজন্য দোটানা অবস্থায় অনিচ্ছায় কাজ করে; তারই ফলে আফগানিস্থানে ফসলের অভাব। আফগানিস্থানকে ফসলের অভাব থেকে মুক্ত করার জন্য হিন্দুদের গ্রাম হতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 পৃথিবীতে কেউ পুরাপুরি সাধু হয়ে জন্মায় না। প্রত্যেকেরই লোভ, ক্রোধ ইত্যাদি রিপু অল্পবিস্তর আছে। গ্রামে থাকতে হলে নানারূপ জটিলতার মাঝে জীবন যাপন করতে হয়। অনেক সময় মারামারি কাটাকাটিও হয়ে যায়। আফগানিস্থানের হিন্দুরা গ্রামে বাস করে গ্রামের সুখস্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতে