পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
৪৭

গেল তখন পোস্ত ভাষায় কথা শুরু হল। আমি যে পোস্ত ভাষা জানি না তাঁরা সে কথা অনেকেই ভুলে গেলেন। আমিও এমনি ভান করেছিলাম যেন তাদের সকল কথাই বুঝতে পেরেছি। গল্প যখন শেষ হয়ে গেল তখন খাবার তৈরী হয়ে গেছে। গল্পের আসরেই খাবার আনা হল। প্রকাণ্ড একটা থালা ভর্তি পোলাও আর একটা থালাতে দুম্বার মাংস। পাঠানেরা মাংসে বেশি মসলা ব্যবহার করে না। অল্প মসলা থাকায় পোলাও এবং মাংস মানিয়েছিল ভালই।

 আমি ছিলাম প্রধান অতিথি, কাজেই খাদ্য হাতে নিয়ে মন্ত্র পড়বার কথা আমারই ছিল। কিন্তু আমি মন্ত্র জানি না বলে অন্য একজন বৃদ্ধ মন্ত্র পাঠ করে খেতে শুরু করার পর অন্যান্য সবাই খেতে আরম্ভ করলেন। ক্ষুধা বেশ ছিল। সেজন্যই বোধ হয় পাঠানদের সংগে তাল রেখে খেতে সক্ষম হয়েছিলাম। আহারান্তে আবার মন্ত্র পাঠ করা হল, তারপর এল চা। চা পান করে সকলকে বললাম “যদি কেহ কিছু মনে না করেন তবে আলিজান খাঁকে সকলের তরফ হতে ধন্যবাদ দেব।” আলিজান খাঁ বলায় অনেকেরই যেন মন বিগড়ে গেল। কিন্তু আমি ছাড়লাম না দু’এক জনের সম্মতির জন্য চারদিকে তাকালাম। অবশেষে যিনি মন্ত্র পড়ছিলেন তিনি সম্মতি দিলেন। আমি সকলের পক্ষ থেকে আলিজান খাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশ্রামার্থ অন্য কামরায় চলে গেলাম। বংশমর্যাদাহীন আলিজান সেদিন হতেই বোধ হয় খাঁ হয়েছিলেন।

 রাত্রে আলিজান আমার জন্য পরিচারক নিযুক্ত করলেন, কিন্তু সেই পরিচারককে বিদায় দিয়ে আরাম করে শুয়ে পড়লাম। সকাল বেলা উঠেই চলে যাব ভেবেছিলাম, কিন্তু আলিজান খাঁ সকালে কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করলেন। আলিজান আমার কাছ হতে খাঁ উপাধি পেয়ে এত খুশী হয়েছিলেন যে বিদায়ের বেলা তিনি কতকগুলি আফগানি মুদ্রা পথ-খরচ হিসাবে দিয়েছিলেন।

 আলিজান খাঁ-এর গ্রাম পরিত্যাগ করার পর আরম্ভ হল আবার পার্বত্য পথ। রোজ দশ মাইল করে পথ চলা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠল। কোনদিন পাঁচ