পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
৫৩

বলেই সর্বপ্রথম সুখ্যাতি লাভ করেছিল। আমানউল্লা এবং বাচ্চা-ই-সিক্কার কথা কেউ বললেন না দেখে আমিই তাঁদের সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলাম। সকলেই আমানউল্লার ছবি মন হতে মুছে ফেলেছিল কিন্তু অনেকে এখনও বাচ্চা-ই-সিক্কার কথা ভূলে নি।

 মোল্লার বাড়ীতে চারদিন কাটিয়ে তাঁর পুত্র ইয়াকুবকে সংগে নিয়ে চললাম কাবুলের দিকে। ইয়াকুবের বয়স মাত্র একুশ। এরই মাঝে সে ফারসি এবং হিন্দুস্থানি ভাষা বেশ আয়ত্ত করে ফেলেছিল। পূর্বেই বলেছি এরা সবাই নিখুঁত এবং সবল যুবক। এই যুবককে সংগে নেবার কারণ একটু পরই বলব।

 পঞ্চমদিন সকাল বেলা আমরা গ্রাম ছেড়ে বড় পথে এলাম। আমি আগে আর ইয়াকুব পেছনে। প্রায় মাইল দশেক চলার পর ইয়াকুব বললে সে একটু বিশ্রাম করবে। আমি তাতে রাজি হলাম এবং উভয়ে একটা পাথরের আড়ালে বসলাম। আমাদের সংগে রুটি এবং মুরগির তরকারি ছিল। উভয়ে বেশ করে খেয়ে নিলাম এবং তারপর কথা শুরু হল। ইয়াকুব বললে “বোখারার দৃষ্টান্ত তাকে উদ্ব‌ুদ্ধ করেছে, সে আফগানিস্থানকে বোখরায় পরিণত করবেই।”

 আমি নির্বাক হয়ে শুধু তার কথা শুনছিলাম। সে ফের বলতে লাগল “পথেই আমি বুঝতে পারব মেডিকেল ছাত্রেরা কত দুঃখ কষ্ট সহ্য করছে।” আমি তাকে বললাম “যখন তোমার উপর অত্যাচার উৎপীড়ন চলবে তখন আমি চুপ করে থাকব না, বাধা দেব। তাতে যদি আমার আফগানিস্থান ভ্রমণ না হয়, না হবে, বেলুচিস্থান হয়ে ইরাণ যাব।” পাঠান জাত বড়ই ভাবপ্রবণ, আমার মুখের সামান্য এই কয়টি কথাতেই সে স্তব্ধ, গভীর হয়ে গেল। আমরা আরও কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে পুনরায় অগ্রসর হলাম।

 একটু যাবার পর পাশেই একটি কবর পড়ল। ইয়াকুব সাইকেল থেকে নেমে কবরে গিয়ে প্রার্থনা করে বললে, “কি প্রার্থনা করেছি জানেন”?

 —বল কি বলেছ। বলেই তার মুখের দিকে তাকালাম।