উপায় খুঁজছিল। প্রায় তিনটার সময় যখন ঘুম ভাঙল তখন ইয়াকুব বললে, আজ এখানেই থাকা যাক, রুটি নিয়ে আসছি বলেই ইয়াকুব চলে গেল।
ইয়াকুব কখনও ভারতবর্ষে আসে নি, আসবার ইচ্ছাও ছিল না। সে ভারতবর্ষ না দেখে দেখতে চাইছিল রুশ দেশ এবং উত্তর চীন। চীনের সংবাদ পাবার তরে ভারি আগ্রহ। কথায় কথায় বললাম “কুসংস্কারের দিক দিয়ে এবং খাদ্যের দিক দিয়ে ভারতবর্ষের সংগে পাঠানদের বেশ মিল রয়েছে। তন্ত্রমন্ত্র, ভূতপ্রেত পাঠানদের ঘাড়ে যেমন চেপে বসেছে, ভারতবাসীর ঘাড়েও তেমনি চেপে আছে। পাঠানরা ভাল রুটি তরকারি অথবা ডাল ভাতই খেয়ে থাকে, ভারতবাসীরাও তাই খায়। পৃথিবীর অনেক স্থানে গিয়েছি, সর্বত্র দেখেছি ভারতবাসী এবং পাঠান একত্রে বসবাস করে। আমেরিকায় পাঠান নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দেয় এবং দাবি করে তারাই আসল এবং পবিত্র হিন্দু। বাঙালী মুসলমানকে পাঠানরা কোনদিনই হিন্দু বলে স্বীকার করত না, এখনও করে না। সেজন্য ডিট্রয় শহরে পাঠান এবং পাঞ্জাবী মুসলমান মিলে গড়েছে হিন্দু সভা আর অন্যান্য ভারতবাসী সবাই মিলে গড়েছে ইণ্ডিয়া এসোসিয়েসন্। পাঠানরা হেসে আমেরিকানদের বলে, আমাদের দেশেও ইণ্ডিয়ান আছে, ঐ দেখো তাদের এসোসিয়েসন। ডিট্রয় যাবার পর যখন আমি ইণ্ডিয়া এসোসিয়েসন উঠিয়ে দিয়ে হিন্দু এসোসিয়েসন নাম দেবার প্রস্তাব করি তখন অনেকেই আমার প্রতি রাগ করেছিল। তার একমাত্র কারণ পাঠানদের সংগে বাংগালী মুসলমানদের মনের মিল ছিল না। অথচ প্রত্যেকেই নিজেদের খাঁটি হিন্দু বলে প্রমান করতে চাইত।
আমরা যে স্থানে বিশ্রাম করছিলাম তার একদিকে একটি পুরাতন ঘর আর অন্যদিকে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠ খালি।
শীত সমাগত। রাত্রি যখন গভীর তখন একদল পুলিশ আমাদের দিকে আসছিল। পুলিশ দেখেই ইয়াকুব পলায়ন করল, আমি একলা শুয়ে থাকলাম। পুলিশ আমাকে একাকী দেখে সাহসী বলে খুব প্রশংসা করে নিজেদের কাজে গেল।