সহরটাতে চক্কর লাগাতে দু ঘণ্টার বেশি লাগল না। বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের। বাসস্থান থেকে আরম্ভ করে রাজবাড়ী দেখে ভাবলাম, এই ত কাবুল সহর। এখন বেড়িয়ে পড়লেই হয়, কিন্তু দেখা হয়েছে পাহাড় পর্বত, ইট-চুণের বাড়ি, যাদের প্রাণ নেই। এবার মানুষ দেখতে হবে। মানুষ দেখতে সময়ের দরকার। কোথাও না থেকে মানুষের সংগে মেলামেশা করা চলে না।
অনেকক্ষণ ভ্রমণ করার পর হঠাৎ বুঝতে পারলাম সহরের বুক চিরে একটি নদী বয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছা হল, জেনে নিই এই কল্পোলিনীই কি সেই নদী যার নাম কাবুল নদী? কিন্তু কাউকে সে কথা জিজ্ঞাসা না করে নদীতে নেমে হাত মুখ ভাল করে যখন মোজা পায়ে দিচ্ছিলাম তখন এক জন লোক জিজ্ঞাসা করল “তুমি কে?”
আমি পথিক—যাকে তোমরা মুসাফির বল। আমি দুনিয়ার মুসাফির, এই হল আমার পরিচয়। জিজ্ঞাসু লোকটিকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেলাম না; সে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। তার দিকে চেয়ে দেখলাম সে ধনী অথবা শিক্ষিত লোক নয়, গরীব লোক। গরীব লোক এই পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করতে পেরেছে তাই যথেষ্ট। আমাদের দেশের গরীব মুখ বুঝেই জীবনের শেষ করে, এখানের গরীব যে মুখ ফুটে প্রশ্ন করতে পারচ্ছে সে জন্য সে নিশ্চয়ই ধন্যবাদের পাত্র।
কাবুলের কালী-মন্দিরেই প্রথমে যাব স্থির করেছিলাম। কালী-মন্দিরে যাবার একমাত্র কারণ হল, সেখানে নাকি একটা সরাই বা ধর্মশালা আছে। ভেবেছিলাম ধর্মশালাতেই গিয়ে দু এক দিন থাকিব, তারপর হোটেলে যেতে পারব। পথের লোককে জিজ্ঞাসা করে কালী-বাড়ীতে পৌঁছতে পারলাম এবং দরজার কড়া নাড়লাম। কয়েকবার কড়া নাড়তেই পুজারী দরজা খুলে দিলেন। লোকটিকে দেখে মনে হল তিনি মন্দিরে হয়তো কোন কারণে এসেছেন, পূজারী নন। লোকটির পোশাক মামুলী ধরনের পাঠানদের মত। তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম তিনিই পূজারী। তখন আমিও তাঁকে আমার পরিচয় দিলাম।