পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
আফগানিস্থান ভ্রমণ

উচুভূমি। দু’দিকে সারি সারি মেটে ঘরগুলি দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যেকটি ঘরেরই দরজা বন্ধ। পথে লোকের চলাচল নাই বললেই চলে।

 মেটে ঘরের সারি দেখে কতকক্ষণ চলার পর বিষ্ণু মন্দিরের পূজারীর বাড়ীর সামনে এলাম। কড়া নাড়া মাত্র একটি যুবক দরজা খুলে দিল। যুবকটিকে দেখে বেশ সরল বলে মনে হল। পরে জানলাম এই যুবক পূজারীর ছোট ছেলে। ছেলেটির গালভরা হাসি দেখে আপনা হতেই তার সংগে কথা বলতে ইচ্ছা হল এবং তারই সংগে কথা বলে ঘরে প্রবেশ করলাম।

 বিষ্ণু মন্দিরের পূজারী শ্রেণীতে সাহা মানে বৈশ্য। এখানেও তিনখানা ঘর এবং সেই একই ধরনে তৈরী। বসবার ঘরে এসে দেখলাম। আমার অপেক্ষায় অনেকগুলি লোক বসে আছে। তারা প্রত্যেকেই আমার সংগে কথা বলবার জন্য আগ্রহান্বিত হয়েই বোধ হয় অপেক্ষা করছিল। একজন ব্রাহ্মণও সেখানে ছিলেন। তাঁর একটু বিশেষত্ব ছিল। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্য শেষ করে উপসংহারে বলতেন, যারা ধর্ম বজায় রেখে চলতে পারে না তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করাই উচিত। যেন ধর্মটাই মানুষের প্রাণ।

 দিনের অবসান হয়ে রাত্রি এল। সকলেই চলে গেল, থাকলাম শুধু আমি এবং পূজারীর একটি ছেলে। পরদিন প্রভাতে চা-পানের পর লক্ষ্য করলাম। এখানকার পূজারীর মনও যেন আমার ওপর বিরূপ। তাঁর সে ভাব বুঝতে পেরে বললাম, ঠাকুর মশায়, এখান হতে আমাকে তাড়াতে পারবেন না, আমি এক মাস এখানে থাকব। খরচ যা লাগে তা দেব, কিন্তু এখান হতে চলে যাও, অথবা এখানে এক দিনের বেশি থাকবার নিয়ম নেই—এসব কথা বললেই, হয়তো আপনাকেই এখান থেকে তল্পীতল্পা গুটাতে হবে। এটা দেবমন্দির, সকল হিন্দুর অর্থসাহায্যে এটা তৈরী হয়েছে, আমারও এতে অধিকার আছে। জানেন তো, হিন্দুস্থানের অনেক হিন্দু-মন্দিরই সাৰ্বজনীন হয়ে গেছে। আফগানিস্থানেও যদি আমি সেরূপ কিছু করতে প্রয়াসী হই তবে দরিদ্র হিন্দুরা নিশ্চয়ই আমার সহায়