পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
আফগানিস্থান ভ্রমণ

বাঙালী হিন্দু।” দারোয়ান আমার মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল।

 যতদিন কাবুলে ছিলাম, প্রত্যেক তিন দিন অন্তর স্নান করতে যেতাম। দারোয়ান আমার ধর্ম সম্বন্ধে আর কখনও প্রশ্ন করেনি। তাকে আর বকশিসও দেই নি। একদিন একজন উচ্চশ্রেণীর অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলাম “হিন্দুদের দিনে স্নান করতে দেওয়া হয় না কেন?”

 তিনি বললেন, আপনাকে কি দিনে স্নান করতে দেয় নি?

 —আমাকে দেবে না কেন, স্থানীয় হিন্দুদের কথা বলছি।

 —ওদের কথা বলবেন না, ওরা নিজেরাই এজন্য দায়ী। গেলেই হয়, কেউ বাধা দেয় না। কিন্তু এরা এত ভীরু এবং কাপুরুষ যে কিছু বলবার পূর্বেই সরে পড়ে। এজন্যই এদের এই দুর্দশা।

 স্নান করে বাইরে এসে নিকটস্থ একটি চায়ের দোকানে প্রবেশ করলাম। এই দোকানে “সবজ্ চা” বিক্রি হয়। চায়ের এতই পিপাসা হয়েছিল যে চার পেয়ালা চা খাবার পর চায়ের পিপাসা মিটেছিল। দোকানি এবং অন্যান্য লোক আমার দেশ কোথায় জিজ্ঞাসা করল। যখন শুনল আমি কলকাতা হতে কাবুলে সাইকেলে করে এসেছি, তখন তারা প্রত্যেকেই আমার করমর্দন করল। এদের কথা শুনে মনে হল, বাংলা দেশে কোন ধর্মে প্রভাব নেই, আছে শুধু তুকতাক, মন্ত্রতন্ত্রের প্রভাব। একজন বললে “বাঙালীরা যাদুশক্তির প্রভাবে বাঘকে কুকুর বানিয়ে রাখে।” এদের এই রকমের আজগুবি কথার প্রতিবাদ করে লাভ হবে না জানতাম—সেজন্য কিছুই বলিনি।

 মন্দিরে ফিরে না এসে ফের সেই বড় চায়ের দোকানে গেলাম। বয় ছিল না —একজন শিখ তখন বয়ের কাজ করছিলেন। তিনি খোলাখুলিভাবেই আমাকে জানালেন, যদিও তিনি ভারতবাসী, তবু বৃটিশের প্রজা নন, তিনি সোভিয়েটের সভ্য। এখানেই থাকেন, তবে স্বেচ্ছায়ই তিনি এ দোকানে এসে কাজ করেন।