পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
৮৩

দিয়ে পা ঘসে দিল। কিছুক্ষণ ধলাই-মলাই করার পর পা দুটাতে শক্তি ফিরে এল। তারপর তারা উপর্যুপরি কয়েক পেয়াল চা খাওয়ালে। চা খেয়ে শরীরে শক্তি এল, চোখের দৃষ্টি ভাল করেই ফিরে পেলাম। অবশেষে পা দুটোকে আগুনের কাছে রেখে চুপ করে বসে রইলাম এবং প্রায় এক ঘণ্টা পর সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করলাম। তখন আমার মনে যে কি আনন্দ! যে সকল পাঠান আমাকে সাহায্য করেছিল এবং যতগুলি পাঠান ঘরে বসে ছিল, তাদের প্রত্যেককে চা-এর নিমন্ত্রণ করলাম। দোকানী প্রত্যেককে চা দিল। প্রত্যেক পাঠান আমার ব্যবহারে খুশী হল। একজন বলল “আপনাকে আমরা সাহায্য করেছি, কর্তব্যের খাতিরে। আমরা সবাই খোদার বান্দা, খোদারই অনুগ্রহে আজ আপনি বেঁচে গেছেন। খোদার দয়ায় আমরা এখানে না থাকলে আপনার মৃত্যু অনিবার্য ছিল।

 আমি লোকটির কথার জবাবে শুধু বললাম, আপনাদেরই অনুগ্রহ।

 প্রচুর পরিমাণে চা খেয়ে পাঠানদের শরীর বেশ গরম হয়েছিল, সেজন্যই বোধহয় গল্পও জমে উঠেছিল বেশ। গল্প নানা রকমের। রাজা, প্রজা, ধনী, দরিদ্র সবাই এই গল্পস্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন। আমিও বাচ্চা-ই-সাক্কোকে সেই গল্পস্রোতে ভাসাতে চেষ্টা করলাম। আমার চেষ্টা সফল হল, তার একটি কারণ ছিল। এই পাঠানগুলি আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিল। পাঠানরা সকল সময়ই কতকগুলি নিজস্ব নিয়ম মেনে চলে। নানা পরিবর্তনের মাঝেও তারা ঐ নিয়মগুলি পালন করে আসছে। যার প্রাণরক্ষা করা হয় তার সামনে কোনও গোপনীয় কথা প্রকাশ করলেও উভয় পক্ষেরই কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। প্রাণরক্ষকের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেউ দাঁড়ায় নি। ইহাই আফগান হিন্দু এবং সুন্নিদের একটা মস্ত জাতীয় বৈশিষ্ট্য। বাচ্চা-ই-সাক্কোর সম্বন্ধে এদের কাছ হতে যা শুনেছিলাম তা কখনও আফগানিস্থানে থাকার সময় কারো কাছে বলিনি। আজও আমার ভ্রমণ-কাহিনীতে এই ঘটনাটি স্থান পেত না, কিন্তু আফগানিস্থান এমনই এক স্তরে আজ পৌঁছেছে যদি আমি যা শুনেছিলাম এখন তা’ প্রকাশ করি