পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১৪ ]

বলিয়াছেন, ‘আমাদিগের ভাষা অতি মহৎ ভাষা, অতি সুন্দর ভাষা। ইংরেজী ও জর্ম্মাণ ভাষার পরস্পর জ্ঞাতিত্ব অনুরোধে জর্ম্মাণভাষোৎপন্ন শব্দ ব্যবহার আমি ক্ষমা করিতে পারি, কিন্তু যেখানে একটি খাঁটি ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করা যাইতে পারে, সেখানে যে ব্যক্তি লাতিন অথবা ফ্রেঞ্চ শব্দ ব্যবহার করে, মাতৃভাষার প্রতি বিদ্রোহাচরণজন্য তাহাকে ফাঁসি দিয়া, তাহার শরীর খণ্ডবিখণ্ড করা উচিত।’ যাঁহারা বাঙ্গালা কথোপকথনের সময় ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন, তাঁহাদের একবারে এরূপ উৎকট দণ্ড না করিয়া, প্রথমে একটি ভদ্র উপায় অবলম্বন করিলে ভাল হয়। যদি দেখা যায়, ভদ্রতায় কিছু হইল না, শেষে সদিবিহিত দণ্ড আছে। সে ভদ্র উপায় এই,—যখন কেহ ইংরেজী মিশাইয়া কথা কহিবেন, তখনই বলা যাইবে ‘ভাষায় আজ্ঞা হউক।’ এ বিষয়ে একটি গল্প আছে। এক ব্রাহ্মণের একটি শ্যামা প্রতিমা ছিল। সেই শ্যামা দেবীমূর্ত্তি তাঁহার উপজীবিকার একমাত্র উপায় ছিল। লোকে সেই ঠাকুরাণীর পূজা দিত, তাহাতে তাঁহার গুজরাণ হইত। একদিন তিনি গাঁজাটি টেনে দেবালয়ের দ্বারে বসিয়া আছেন, মনে হইল, দেবী ঘরের ভিতর হইতে তাঁহার সঙ্গে কথা কহিতেছেন। দেবতারা কখনই ভাষায় কথা কহেন না, দেববাণী সংস্কৃতেই কথা কহিয়া থাকেন; তিনি ত সংস্কৃত জানেন না, অতএব দেবীকে বলা হইল, ‘মা! আমি অতি মূঢ়; ভাষায় আজ্ঞা হউক।’ এই ‘ভাষায় আজ্ঞা হউক’ কথাটা আমাদিগকে শিখিয়া রাখিতে হইবে। ইংরেজী শব্দ মিশাইয়া, কেহ বাঙ্গালা বলিলেই ঐ কথা বলিতে হইবে।” আমি প্রসঙ্গসঙ্গতিক্রমে শ্রদ্ধাস্পদ রাজনারায়ণ বাবুর উৎকৃষ্ট উপদেশ সমস্ত উদ্ধৃত করিলাম। এই উপদেশ মনে না রাখিলে আমাদের জাতীয় ভাবের উন্মেষ হইবে না।

 কেবল কথোপকথনে নয়, চিঠিপত্র লিখিতেও এক্ষণে ইঙ্গরেজীর