পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

কুমার প্রার্থনা করবেন”। আমি কবিত্বময় রাবীন্দ্রিক ভাষায় গদগদ কণ্ঠে এক বক্তৃতা পরম পিতার নিরাকার কর্ণের উদ্দ্যেশ্য ছেড়ে দিয়ে ছেলেদের মধ্যে এক পরম বিস্ময়ের বস্তু হয়ে উঠলুম। প্রার্থনা কিন্তু সে দিনের পর আর আমি করলুম না, এ রকম প্রার্থনা করার সমীচীনতা নিয়ে গণেশ বাবুর সঙ্গে আমার খুব এক চোট তর্ক হয়ে গেল। ভগবান যদি সর্ব্বজ্ঞই হন তা হলে তিনি পিঁপড়াটিরও মনের কথা টের পান। বক্তৃতা দিয়ে জগতের পরম শিল্পীকে কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য সম্বন্ধে উপদেশ দেবার বা অনুরোধ জানাবার কোন আবশ্যকতা থাকে না। আর ভগবৎ সাক্ষাৎকার যে করে নি তার পক্ষে ভগবানের সম্বন্ধে পঞ্চমুখ হয়ে বলা কতখানি হাস্যকর ব্যাপার। এই সব নিয়ে নিরীহ গণেশ বাবুকে আমি কিছুক্ষণ অতিষ্ঠ করে তোলায় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাঁচলেন যে আর আমায় প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা হবে না। সুতরাং সেই থেকে নিরাকার পরব্রহ্মও রক্ষা পেলেন, আমিও বাঁচলুম।

 পাটনা কলেজে তখন প্রথম বার্ষিক শ্রেণীতে আমার সঙ্গে একটি ছেলে পড়তো, তার নাম ছিল বঙ্কিম। তাকে আমার খুবই ভালো লাগতো, তবু তার সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে আমি পারি নি। ক্লাসের ছেলেরা আমার অমিশুক ভাব দেখে আমাকে অহঙ্কারী ঠাউরে নিয়েছিল, পরস্পরের মধ্যে নাকি জল্পনা আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, ষে, আমার গলায় ছেঁড়া জুতোর মালা পরিয়ে দেওয়া হবে। কাজে কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি।

১২৫