পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

পয়সায়। এত চরিত্রদোষ থাকতেও এই চিনির মত মিষ্টি মানুষটির শত্রু বলে ভূভারতে কেউ ছিল না। নিজের দুঃখের জীবন নিয়ে তিনি ছিনিমিনি খেলতেন বটে কিন্তু পরের জীবনের জন্য তাঁর ছিল মায়ের অধিক দরদ ও সমবেদনা। দোষে গুণে সুন্দর ও নিতান্তই human চরিত্রগুলির মাধুর্য্য দেখতে না পেয়ে মানুষ করে মরালিটির ভড়ং—একেই বলে prudery!

 সেই বাবা উদাসীন হয়ে আমাদের পাগল মায়ের কাছে ফেলে রেখে ছিলেন। রোহিণীর বাড়ীতে শুধু একবার মাত্র বাবা এসেছিলেন বলে আমার মনে আছে। একদিন আমি ও দিদি বাইরে খেলা করছি, কে জন হোমরা চোমরা গোছের মানুষ এলো। ভিতরে যখন আমাদের ডাক পড়লো তখন আমার এইটুকু মনে আছে, যে, লম্বা দাড়ীওয়ালা ভীষণদর্শন কার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে আমি আর দিদি সারা ঘরটার দেয়ালের ধারে ধারে ছুটোছুটি করছি আর সেই মানুষটি দুই হাত বাড়িয়ে আমাদের বুকে নেবার জন্যে পাগলের মত আসছে। তারপর অজস্র খেলনা বিস্কুটের রমণীয় স্তুপের মাঝে কখন যেন আমাদের আত্মসমর্পণের পালা সুখের সিন্ধুর দোল খেয়ে সাঙ্গ হয়ে গেল, সে কথা আর স্পষ্ট মনে নেই। বাবার কোলে চড়ে বসেছিলুম, আর তাঁর লম্বা দাড়ী আমার গায়ে পড়ছিল এই রকম একটা ক্ষীণ স্মৃতি—অনেক কিছু আধভোলা সামগ্রীর স্তূপে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। আহা! সে বাবা এখন তার শ্রান্ত উচ্ছৃঙ্খল ছেলেকে ভুলে কোথায় যে গেল!

৩১