পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

দুঃখের টান যে এমন চিত্তবিমোহন হতে পারে তা’ প্রথম অনুভব করে সেই দশ বৎসর বয়সে আমার চোখে ধারা বইতো। হাসি অশ্রুর সুখস্রোতে নিশি ভোর হয়ে যেত। তখনও কলা রাজ্যের দু’টি বড় জিনিস—ছবি ও গানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় নি, কিন্তু ষ্টারের রঙ্গমঞ্চের মায়াপুরীতে নৃত্য ও গীতের আমি যে প্রথম আস্বাদন পেলুম আমার এই কৈশোরের দিনে, তা খুব উচ্চাঙ্গের নৃত্য-গীত না হলেও আমার বালক-চিত্তকে তা’ আলোড়িত মথিত করে তুলেছিল। কোথায় যেন একটি পরিপূর্ণ ছন্দের রূপের ঝঙ্কারের রাজ্য আছে যার শিব তাণ্ডবে এ জগত ভেঙে যায়, যার রাসলীলায় এ জগত রসে মুঞ্জরিত পুষ্পিত হয়ে ওঠে, যার স্বপ্নালু সুছন্দ গতিতে নব নব সৃষ্টিকমল অনন্ত কোন্ দিগন্ত জুড়ে ফুটে ওঠে; এ নৃত্য-গীত তারই আভাষ যেন আমাকে দিয়ে চিরজীবনের মত কবি করে দিয়ে গেল। নৃত্যগীত বা অভিনয়ে আর্ট ও সুকুমার কলাজ্ঞান না থাকলে তা’ কতখানি বীভৎস ও vulgar হতে পারে তা’ আমাদের দেশের রসজ্ঞানহীন চাষাড়ে-বুদ্ধি শ্রোতার দলে খুব কম লোকেই বোঝে। কলাজগতে ভারতের আপামর সাধারণ এমন কি ছাত্র-সমাজও এখনও প্রায় গোমূর্খ অবস্থায় আছে, নইলে এত দিনে বাঙলা নাট্যমঞ্চের বহু রূপান্তর ঘটে যেত। তবু কিন্তু পথের পাশে নৃত্যশীলা বেদের মেয়ের কণ্ঠে ও অঙ্গলীলায় সেই পরম রসই অমার্জ্জিত crude অবস্থায় উথলে উঠছে যা’র কথায় উপনিষদ বলে গেছেন—

৬২