পাতা:আমার কথা (প্রথম খণ্ড) - বিনোদিনী দাসী.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৴৹

 বলিয়া পতির পরিচ্ছদ যাচ্ঞা একপ্রকার অতুলনীয় হইত। সে অর্দ্ধোন্মাদিনী বেশ—আগ্রহের সহিত স্বামীর পরিচ্ছদ হৃদয়ে স্থাপন এখনও আমার চক্ষে জাগরিত। যাহাকে পূর্ব্বাঙ্কে অপ্সরীনিন্দিত সুন্দরী দেখা যাইত, পরিচ্ছদ-যাচ্ঞার সময় তাপশুষ্ক পদ্মের ন্যায় মলিনা বোধ হইত। “Light of Asia”-রচয়িতা Edwin Arnold সাহেব এই গোপার অভিনয়ের প্রশংসা করিয়াছিলেন, এবং তাঁহার “Travels in the East” নামক গ্রন্থে বঙ্গনাট্যশালা অতি প্রশংসার সহিত বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি রঙ্গালয় দর্শনে বুঝিয়াছিলেন যে, হিন্দু আধ্যাত্মিক অবস্থায় উন্নত, নচেৎ বুদ্ধদেবচরিত্রের ন্যায় দার্শনিক অভিনয় স্থিরভাবে হিন্দুদর্শকমণ্ডলী দেখিতেন না। বিদেশীর চক্ষে এইরূপ হিন্দুর হৃদয়ের অবস্থার পরিচয় দেওয়া। রঙ্গালয়ের পক্ষে সামান্য গৌরবের বিষয় নহে। রঙ্গালয়ের পরমবিদ্বেষী ব্যক্তিকেও ইহা স্বীকার করিতে হইবে।

 বলা হইয়াছে যে, সকল ভূমিকাতেই বিনোদিনী সাধারণের প্রশংসাভাজন হইয়াছিল, কিন্তু “চৈতন্যলীলায়” চৈতন্য সাজিয়া তাহার জীবন সার্থক করে। এই ভূমিকায় বিনোদিনীর অভিনয় আদ্যোপান্তই ভাবুক-চিত্ত-বিনোদন। প্রথমে বাল-গৌরাঙ্গ দেখিয়া ভাবুকের বাৎসল্যের উদয় হইত। চঞ্চলতায় ভগবানের বাল্যলীলার আভাস পাইতেন। উপনয়নের সময় রাধাপ্রেমমাতোয়ারা বিভোর দণ্ডী দর্শনে দর্শক স্তম্ভিত হইত। গৌরাঙ্গমূর্ত্তির ব্যাখ্যা “অন্তঃকৃষ্ণ বহিঃ রাধা—পুরুষ প্রকৃতি এক অঙ্গে জড়িত।” এই পুরুষপ্রকৃতির ভাব বিনোদিনীর অঙ্গে প্রতিফলিত হইত। বিনোদিনী যখন “কৃষ্ণ কই—কৃষ্ণ কই?” বলিয়া সংজ্ঞাহীনা