পাতা:আমার জীবন.djvu/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার জীবন 8ט দেখিবে বলিয়৷ ভারি ভয় হইল। আমি মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, এই পুস্তকের পাত যদি আমার হাতে কেহ দেখে, তাহ হইলে নিন্দার একশেষ হইবেক । অধিকন্তু কটুবাক্য বলিলেও বলার সম্ভব আছে । লোকের নিকট নিন্দিত কর্ম করা, কিম্বা কটুবাক্য সহ করা বড় সাধারণ ব্যাপার নহে । এ সকল বিষয়ে আমার ভারি আশঙ্কা ! বিশেষতঃ সে সময় এখনকার মত আচার ব্যবহার ছিল না । সে এক কাল গিয়াছে । সম্পূর্ণরূপে পরাধীনতায় কাল ষাপন হইত। বিশেষতঃ আমার অতিশয় ভয় ছিল । তখন ঐ পুস্তকের পাতটি লইয়৷ আমি মুস্কিলে পড়িলাম। হাতে করিয়া ভাবিতে লাগিলাম, কি করিব, কোথায় রাখিব, কোথায় থুইলে কে দেখিবে । এ প্রকার ভাবিয়া মনে মনে স্থির করিলাম, যে স্থানে থাকিলে আমি সতত দেখিতে পাইব অথচ অন্য কেহ না দেখে, এমন স্থানে রাখা উচিত । আর কোথা রাখিব, রান্নাঘরের হেঁশেলের মধ্যে খোড়ীর নীচে লুকাইয়। রাখিলাম। কি করিব, সকল দিবস সংসারের কাজে অবকাশ পাওয়া যায় না । সেই পাতাটি যে কখন দেখিব, তাহার সময় নাই ; রাত্রে পাক-সাক করাতেই ভারি রাত্রি হইয়। পড়ে। তখন ঐ সকল কাজ মিটিতে না মিটিতেই ছেলেপিলেগুলি জাগিয়া উঠিয়৷ বসে। তখন কি আর অন্ত কোন কথা । তখন কেহ বলে মা মুতিৰ, কেহ বলে মা ক্ষিদে লেগেছে, কেহ বলে মা কোলে নে, কেহ বা জাগিয়া কান্না আরম্ভ করে । তখন তো ঐ সকলকে সাম্বন৷ করিতে হয় । ইহার পরে রাত্রিও অধিক হয়, নিদ্রা আসিয়া চাপে, তখন লেখাপড়া করিবার আর সময় থাকে না । কি প্রকারে আমি শিখিব তাহার কোন উপায় দেখি না । লেখাপড় একজন না শিখাইলে কেহ শিখিতে পারে না। আমি যে দুই চারিট অক্ষর মনে মনে পড়িতে পারি, তাহাও লিখিতে জানি না । লিখিতে না জানিলে জিতাক্ষর হওয়া হুঃসাধ্য। সুতরাং ঐ লেখা পাতটি আমি কেমন করিয়া পড়িব ? আমি ভাবিয়া কোন উপায় দেখি না ! অধিকন্তু কেহ দেখিবে বলিয়া সর্বদাই ভয় ।