পাতা:আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৯৫২).pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার দেখা রাশিয়া

 যুদ্ধে অনাথ শিশু ও কিশোর কিশোরীদের ভবনে গিয়ে দেখলাম, দয়ার দানে প্রতিপালিত অনাথ আশ্রমের ভীরু বাসিন্দা এরা নয়। এরা অনাথাশ্রম বলে না, বলে শিশুদের প্রাসাদ। আমাদের দেশের দু’চারটে অনাথ আশ্রম দেখেছি; যেখানে অভাগারা ধনীর উচ্ছিষ্টে প্রতিপালিত হয়। কড়া শাসনে পঙ্গু মন নিয়ে নিরানন্দে থাকে। এই বা কয়টি? পথে পথে ভিক্ষা করা, নয় অচিকিৎসায় মরা এই তো সনাতন নিয়ম। এখানে দেখলাম ঠিক উল্টো বলিষ্ঠদেহ হাস্যোজ্জ্বল মুখ বালক বালিকারা আমাদের তাদের পড়ার ঘর শোবার ঘর দেখালো, ক্ষুদে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় নাচগান করে খুসী প্রকাশ করলো। এরা পারিবারিক জীবনের ভাগ্য বিপর্যয়ে পরিত্যক্ত আবর্জনা নয়, এরা সমাজের সম্পদ।

 অপরাহ্ণে ভল্গায় মোটর বোটে উঠেছি। কিছু দূর যাবার পর সহরের ওপারে থামলো। সকলে নেমে পড়লাম। খাড়া পাড়, বালি ঠেলে ওপরে উঠলাম। একজন বুড়ী নাতি নাতনী নিয়ে এসেছেন, স্নান করবেন। অনেকেই নেমে পড়লেন জলে। আমিও নেমে পড়লাম। আমার সাঁতারকাটা দেখে তো সকলে অবাক। কমরেড অকসানা উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, বেশী দূরে যেয়ো না। কে শোনে কথা! আমি অজ বাঙ্গাল, জল দেখে ভয় পাবো! অনেক দিন পরে সাঁতার আর অবগাহন হ’ল। বোট ফিরে চলেছে, আকাশে চাঁদ উঠলো। আমার স্বদেশের সঙ্গে এর কি কোন তফাৎ আছো?

 তফাৎ আছে বৈকি! এখানে কেবল নদীতে নয়, মানুষের

১০০