পাতা:আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৯৫২).pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার দেখা রাশিয়া

মনের মরা গাঙ্গেও জোয়ার এসেছে। আরো বড় স্তালিনগ্রাদ গড়ার অক্লান্ত উদ্যম চলেছে। এরা যে ভাবে চূড়ান্ত ত্যাগস্বীকার করে স্তালিনগ্রাদকে শত্রু কবল থেকে উদ্ধার করেছে সেই ভাবেই নবসৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব নিয়েছে। আর আমার স্বদেশ কর্মনির্দেশহীন বাণীর বন্যাস্রোতে তৃণখণ্ডের মত ভেসে চলেছে, তুলনা করতে গেলে চিত্ত বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।

 ত্রিশ বর্গ মাইল জুড়ে নূতন স্তালিনগ্রাদ তৈরী হচ্ছে; ‘সিটি আর্কিটেক্টর’-এর আপিসে গিয়ে তার পরিচয় পেলাম। তিনি নূতন নগর তৈরীর পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন। সহরের কেন্দ্রস্থলে তিন বর্গ মাইলের মধ্যে টাউন হল থিয়েটার স্কুল কলেজ হোটেল বাগান রাস্তার নক্সা দেখলাম; ১৯৫৬ সালের মধ্যেই নির্মানকার্য শেষ হবে। ভল্গা নদীর উজানে যে বৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী হচ্ছে ১৯৫২ সাল থেকে তার কাজ আরম্ভ হবে। সেই বিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগাবার জন্য শিল্পকেন্দ্র ও কারখানাগুলি প্রস্তুত হচ্ছে। সোবিয়েতের জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছায় চালিত সৃজনী শক্তির দুঃসাহস স্তালিনগ্রাদে মূর্ত হয়ে উঠছে।

 শহীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে দেখছি বীরের শোণিত সিক্ত ভূমির ওপর শ্যামল তরুশ্রেণী অজস্র ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে, তারই স্নিগ্ধ ছায়ায় হাস্যমুখর শিশুরা খেলায় মেতেছে। এমন সময় বার বছরের একটি ছেলের হাত ধরে একটি বৃদ্ধা চলতে চলতে আমাদের দেখে দাঁড়ালেন। আমরা ভারতীয় জেনে তার বহু রেখায় কুঞ্চিত ললাটের নীচে নিষ্প্রভ চোখ দুটিতে প্রীতির প্রসন্নতা ফুটে উঠলো।

১০১