পাতা:আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৯৫২).pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার দেখা রাশিয়া

বললেন, ‘তোমাদের দেশের কথা কিছু কিছু শুনেছি তোমরাও তো শান্তি আন্দোলন করছো।’

 বললাম, ‘আমরা শান্তিবাদী। এখানে এসে যা দেখলাম; তাতে তৃতীয় মহাযুদ্ধ যদি ঠেকান না যায় তা’হলে মানুষ সভ্যতার সব সম্পদ খুইয়ে দেউলে হয়ে যাবে।’

 বৃদ্ধা হাত তুলে আঙ্গুল দিয়ে একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘ঐ খানে একটা ভাঙ্গা ট্যাঙ্কের পাশে দাঁড়িয়ে আমার পুত্র পুত্রবধূ ও কনিষ্ঠ পুত্র মেশিনগান দিয়ে শত্রুকে ঠেকিয়েছে। পিতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে ওরা তিনজন ঐখানেই এক সঙ্গে প্রাণ দিয়েছে। সেই দারুণ দুর্দিনের স্মৃতি এবং এই শিশুটিকে বুকে করে আমি বেঁচে আছি। স্তালিনগ্রাদের ছেলেমেয়েরা আবার শান্তির নীড় রচনা করছে, সে কি শত্রুর বোমায় ধ্বংস হবার জন্য? তোমরা দেশে ফিরে গিয়ে এই কথাই বলো, আমরা যুদ্ধ চাইনে, কারো সম্পদে আমাদের লোভ নেই ঈর্ষা নেই। আমাদের সন্তানরা মানুষ হবে, বধ্যভূমির বলির পশু হবে না।’

 মধ্যযুগের ইতিহাসের পাতা থেকে যেন কোন বীর পুত্রের আত্মোৎসর্গের গৌরব-গর্বিতা রাজপুত নারী আমাদের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। অপরিচিত বিদেশীদের সম্মুখে তাঁর অবরুদ্ধ ভাবাবেগ সামলে নিয়ে বললেন, ‘আশীর্বাদ করি, ভারত-সন্তানেরা যেন নরঘাতক না হয়।’ নত মস্তকে বললাম, ‘মা, আজকের দিনে এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ আর নেই।’

 কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গণে শত পুত্র বিয়োগ বিধুরা গান্ধারীর বিলাপ,

১০২