আমার দেখা রাশিয়া
চার-পাঁচটা হোটেল আছে। শুনলাম, আরও গোটাকয়েক অতিকায় হোটেল তৈরী হচ্ছে। এরই ১২৭ নং কামরা আমার জন্য নির্দিষ্ট হ’ল। পুব দিকে জানলা, সম্মুখে সিকি মাইল চওড়া রাস্তা, তার ওধারে ক্রেমলিন; উচ্চ প্রাচীরের ওপরে জারের আমলের গীর্জার গম্বুজ, পথের দুই প্রান্তে সারিবদ্ধ চেনার গাছগুলি গ্রীষ্মকালের পত্রসম্ভারে ঘন সবুজ। ট্রাম, বাস, ট্রলি-বাস মোটর চলেছে, আর চলেছে জলস্রোতের মত জনস্রোত। ভীড় নেই, ঠেলাঠেলি নেই, নেই চীৎকার ও হট্টগোল। এ কোন্ লোক থেকে কোন্ লোকে এলাম!
অপরাহ্ণে পুষ্পগুচ্ছ নিয়ে আমরা রেড স্কোয়ারের দিকে অগ্রসর হলাম। প্রায় দুই মাইল লম্বা শ্রেণীবদ্ধ জনতা মন্থর পদে এগিয়ে যাচ্ছে লেনিনের সমাধির দিকে। আমাদের ‘গাইড’ গিয়ে পরিচয় দিলেন, “ইণ্ডিসকী পিশাচলী ডেলীগাৎসী—” জনতা সম্ভ্রমে বিদেশীদের জন্য পথ করে দিল। রুশ ভাষায় সাহিত্যিক লেখকদের বলে “পিশাচ”। আমাদের দেশে লেখকদের যে দশা, তাতে ও-শব্দটা বাঙ্গলা ভাষাতেই মানানসই হ’ত। যা হোক, আমরা সমাধির দ্বারদেশে পুষ্পস্তবকের শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। মর্মর-নির্মিত বেদীর ওপর ডিম্বাকৃতি কাঁচের আবরণের মধ্যে, চিরপদদলিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম ও প্রধান সেনাপতি মহামানব লেনিন চিরনিদ্রায় শায়িত, প্রশস্ত ললাটে দৃঢ়নিবদ্ধ ওষ্ঠে স্বল্প শ্মশ্রুমণ্ডিত কপোলে চিবুকে বিশ্বমানবের মুক্তির মৃত্যুঞ্জয়ী সঙ্কল্প। অবনত শিরে প্রণাম নিবেদন করে নিষ্ক্রান্ত
১২