আমার দেখা রাশিয়া
শিক্ষিতবর্গের অবজ্ঞা সত্ত্বেও সাহিত্যপ্রতিভার যে বিকাশ হ’ল, তাও জমিদারী ও সরকারী চাকুরীর আওতায়। পরবর্তী যুগে দেখলাম, হঠাৎ টাকা করা এক শ্রেণীর মূর্খ ও আত্মম্ভরী ধনীর আবির্ভাব; সাহিত্য শিল্পকলা এদের নিকট অবজ্ঞেয়। অথচ গণতান্ত্রিক জনতা মহারাজও তাঁর সিংহাসন পাননি। এই প্রতিকূলতা ঠেলে যাঁরা জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের বন্দনা করবার সময় আমার মনে হয়, সেই সব কবি ও সাহিত্যিকের কথা, যারা দারিদ্র্য ও বুভুক্ষার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, উদরান্নের জন্য রক্তপিপাসু প্রকাশকের নিকট সামান্য মূল্যে গ্রন্থ বেচে দিয়েছে, অথবা আশ্বাস পেয়ে বঞ্চিত হয়েছে। যে মনের ক্ষেত্রে সাহিত্যের ফসল ফলবে, সেই মন চতুর বিষয়ীর বিষাক্ত নিঃশ্বাসে মরুভূমি হয়ে গেছে। কল্পনাপ্রবণ সংবেদনশীল তরুণ মন, যেখানে সোনা ফলতো, সেখানে অচরিতার্থতার গ্লানির ক্লেদ দীর্ঘশ্বাসে দুলে ওঠে। কে নভেল লিখে পরসা করলো, কে সিনেমার গল্প লিখে বাড়ি-গাড়ি করলো, আমরা তাই চোখ মেলে দেখি। কিন্তু দেখিনে, একটু সহানুভূতি সাহায্য এবং জীবিকার নিষ্ঠুর প্রয়াস থেকে অবকাশ পেলে যারা জাতীয় সাহিত্যের গৌরববৃদ্ধি করতে পারতো, তারা ঝরে যায়, সরে যায়, কালের চিহ্নহীন পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। যৌবনে কবি গোবিন্দদাসকে তিন দিন চিড়ে খাওয়ার পর অভুক্ত অবস্থায় মরতে দেখেছি, সুরেশ সমাজপতিকে প্রায় অচিকিৎসায় চিরনিদ্রায় অভিভূত হতে দেখেছি। মলিন শয্যাশায়ী রুগ্ন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার হাত
৪৪