পাতা:আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৯৫২).pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার দেখা রাশিয়া

অতি সাধারণ এক অট্টালিকায় তিনখানা সাদাসিধে কক্ষে স্তালিন থাকেন। ৪ঠা জুলাই ছাড়পত্র নিয়ে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব দরজা দিয়ে ক্রেমলিনে প্রবেশ করলাম। আমাদের মত আরও অনেক দল নিজস্ব গাইড নিয়ে দেখতে এসেছে। পুরাতন জারদের প্রাসাদের বেশীর ভাগ ম্যুজিয়ম। অতীতের প্রবল প্রতাপ জারদের মণিমাণিক্যখচিত মুকুট ভূষণ ঘোড়ার সোনার সাজ স্বর্ণ ও রৌপ্য-পাত্র কত অলঙ্কার! প্রধান পাদ্রীদের বসন-ভূষণও জারের চেয়ে কোন অংশে নিষ্প্রভ নয়। ধর্মতন্ত্র ও রাজতন্ত্র একত্র হাত মিলিয়ে জনসাধারণকে কি ভাবে শোষণ ও শাসন করতো তার বহু নিদর্শন দেখলাম। রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের গোড়ার দিকে গল্প শুনতাম, বলশেভিকরা জারদের ধনরত্ন শিল্পকলার নিদর্শন সব লুটপাট করে নিয়েছে। এখানে এবং লেনিনগ্রাদের উইনটার প্যালেসে তার বিপরীত ব্যাপারই প্রত্যক্ষ করলাম। চার শতাব্দীর সম্রাটদের সংগৃহীত এবং পারস্য ও তুরস্কের শাহ সুলতানদের হীরামুক্তাখচিত পানপাত্র পেটিকা প্রভৃতি এবং ফরাসী অস্ত্রিয়া জর্মন সম্রাটদের উপহার-সামগ্রী এরা সযত্নে রক্ষা করেছে। সম্রাটদের প্রাসাদের সাজসজ্জা আসবাব দেয়াল ও ছাদের স্বর্ণখচিত কারুকার্য ফরাসী ও ইতালীয় শিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি, সবই অক্ষত রয়েছে। ছেলেবেলায় পড়া পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য পদার্থ মস্কৌ নগরীর বিশাল ঘণ্টাও তেমনি ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে। ঐশ্বর্য বিলাস প্রতাপ আজ কেবল তার বিষাদময় নিদর্শন রেখে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চিরনিদ্রিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের অতিকায় জীবের কঙ্কালের মত।

৫৩