পাতা:আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৯৫২).pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার দেখা রাশিয়া

গো-খাদকদের গো-পালনের সযত্ন ব্যবস্থা দেখলে লজ্জায় মাথা নোয়াতে হয়।

 অধ্যক্ষের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রে গেলাম। দিগন্তবিস্তীর্ণ ঊষর স্তেপভূমি, হাজার বছর ধরে বন্ধ্যা হয়ে পড়েছিল। বার্চ, পাইন ও ওকের অরণ্যবলয় তৈরী করে, তীব্র শুষ্ক বায়ু রোধ করে, সেচ ব্যবস্থায় ক্রমে স্তেপভূমি শস্যশালিনী হয়ে উঠছে। অনুর্বর প্রান্তরকে জয় করার সংগ্রাম চলেছে, প্রধান হাতিয়ার ওক-গাছের চারাগুলি সবল হয়ে উঠছে। এক একটি অরণ্যবলয় তৈরী হবে, আর শস্যক্ষেত্র এগিয়ে যাবে। বহু দিনের পতিত জমিতে বুক-সমান উঁচু রাই-এর ক্ষেতে দাঁড়িয়ে মনে হতে লাগলো, এরা পারছে, কেন না রাষ্ট্র মাত্র ত্রিশ বছরে আদিম যুগের কৃষি ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানের যন্ত্রযুগে এনে ফেলেছে। আর আমাদের দেশের কৃষকের এখনো শ্রীরামচন্দ্র বা অশোকের যুগের লাঙ্গল-বলদ ও দৈবের দয়ায় বৃষ্টিই ভরসা। বিদেশ থেকে আমরা অন্ন কিনি, অন্নসৃষ্টির যন্ত্র কিনি না। আমাদের আহার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকবার প্রথাটা আদিম যুগেই রয়ে গেল; কিন্তু মরবার ও মারবার অতি আধুনিক মারণযন্ত্রগুলি আমরা বিদেশ থেকে প্রচুর আমদানী করি। কৃষকের ছেলে আকবরের আমলের কাঠের লাঙ্গল নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে যায়, কিন্তু সে যদি সৈন্য ও পুলিশ দলে ভর্তি হয়, তার হাতে সে যুগের লাঠী সড়কী বল্লমের পরিবর্তে শোভা পায় দ্রুত মৃত্যুস্রাবী রাইফেল।

 এই গর্কী গ্রামেই একটা বাড়িতে লেনিন (১৯১৮-২৪) বাস

৫৮