আমার দেখা রাশিয়া
এত বড় পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে সেদিনের ইয়োরোপের কূটনীতিক মহলে বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়নি। কেবল পারীর প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ফ্রান্সের নানা স্থানে সভা করে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯০৫-এর ৩০শে জানুয়ারী পারীর এক জনসভায় বিখ্যাত সাহিত্যিক ও মনীষী আনাতোল ফ্রাঁসের বজ্রস্বর মন্দ্রিত হ’ল; “জার ক্ষুধিত নরনারীকে হত্যা করেছে, তারা চেয়েছিল খাদ্য, পেয়েছে বুলেট, জার জারকেই হত্যা করেছে। যে সব নির্দোষীর রক্তে নেভা নদীর জল রাঙ্গা হ’ল, তার প্রত্যেক শোণিতবিন্দু থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জন্মাবে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে। জার যে বিদ্রোহের আগুন জ্বালালেন, তা তারই চিতাশয্যা। নিকোলাস আলেকজেণ্ডারের দিন ফুরিয়েছে, ইতিহাসে তার কলঙ্কিত স্মৃতিমাত্র থাকবে। জার গভর্নমেণ্ট শ্রমিকদের হত্যা করেছে, শিক্ষিত যুবকদের জেলে পুরছে, সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠাচ্ছে। আমি দেখছি, যে বিপ্লব বিদ্রোহ আরম্ভ হ’ল, তা থামবে না। আমার একমাত্র শঙ্কা, এই রক্তাক্ত পথ যেন দীর্ঘ না হয়। এ দৃশ্য ভয়াল অথচ গরিমাময়। ছাত্র অধ্যাপক সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী শ্রমিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, মরণ অভিসারে। একটা পীড়িত জাতির মর্মমথিত ক্রন্দন বিশাল সাম্রাজ্যের বিস্তার থেকে উঠে, আকাশে প্রতিধ্বনি তুলছে। জারের নৃশংস পাশবিকতা, আজ রুশজাতির সত্যানুরাগ ও সততার সম্মুখীন। অত্যাচারই অত্যাচারীকে গ্রাস করবে, সে দিনের বেশী বিলম্ব নেই।”
৮০