পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
আ মা র বা ল্য ক থা

মাসে সন্ধ্যার পরে একদিন ব্রাহ্মসমাজের উপাসনাতে উপস্থিত আছেন, এমন সময়ে হঠাৎ মূর্ছিত হইয়া পড়িয়া যান। তখন অনেক যত্নে তাঁহার চৈতন্য সম্পাদন হইল বটে, কিন্তু দুই দিবস পরে একদিন তত্ত্ববোধিনীর প্রবন্ধ লিখিতেছেন, এমন সময়ে মস্তিষ্কে একপ্রকার অভূতপূর্ব জ্বালা হইয়া লেখনী ত্যাগ করিতে হইল। তদবধি সে লেখনী আর ধারণ করিতে পারেন নাই।

 “ইহার পরে একপ্রকার জীবনমৃত অবস্থাতে থাকিয়াও তিনি অনেক গ্রন্থ প্রচার করিয়াছেন। অধিক কি, তাঁহার ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ নামক সুবিখ্যাত ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ এই অবস্থাতেই সঙ্কলিত। তাঁহার মুখে শুনিয়াছি, তিনি প্রাতঃকালে সুস্নিগ্ধ সময়ে শয্যাতে শয়ন করিয়া কোন দিন এক ঘণ্টা, কোন দিন দেড় ঘণ্টা করিয়া মুখে মুখে বলিতেন, এবং কেহ লিখিয়া যাইত; এইরূপ করিয়া এই মহাগ্রন্থ সঙ্কলিত হইয়াছিল।”

 ধন্য তাঁর ধৈর্য ও অধ্যবসায়! এই গ্রন্থখানি অক্ষয়কুমারের অক্ষয় কীর্তিরূপে বঙ্গসাহিত্য সমাজে বিরদিন বিরাজমান থাকিবে।

 এইরূপে যখন তিনি শিরঃপীড়ায় অবসন্ন হয়ে পড়লেন, তখন তাঁর সঙ্গে আমি কাশীপুরে গঙ্গার ধারের এক বাগানে মাস দুই কাটিয়েছিলুম। কি পরিবর্তন! আগেকার সেদিন আর নাই; সে স্ফূর্তি, সে উৎসাহ নির্বাপিত হয়েছে—সে অক্ষয় আর নাই। শরীরে তৈল মর্দন, ওজন করে ঔষধ সেবন, মাপ জোক করে আহারের ব্যবস্থা—এই প্রকার শরীর সেবাতেই দিনযাপন করতেন। সেই প্রখর জ্ঞানোজ্জল চিত্ত সংশয় অন্ধকারে আচ্ছন্ন।

 “জীবনের অবসানকালে তিনি বালিগ্রামের গঙ্গাতীরবর্তী এক উদ্যান-বাটীতে থাকিয়া, এইরূপে গ্রন্থ রচনা করিতেন; এবং অবশিষ্ট কাল উদ্ভিদ্‌তত্ত্বের আলোচনা ও সমাগত ব্যক্তিদিগের সহিত জ্ঞানানুশীলনে কাটাইতেন। সেখানে ১৮৮৬ সালের ১৫ই জ্যৈষ্ঠে তাঁহার দেহান্ত হয়।”