পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
আ মা র বা ল্য ক থা

স্বদেশের গির্জা ও প্রাসাদগুলি তাদের নিকট হীন বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। নিজের কল্পনায় মগ্ন হয়ে বসে আছি, এমন সময় হঠাৎ আমার শিক্ষকমশায় এসে কানটি ঝাঁকিয়ে দিয়ে বল্লেন যে, এতক্ষণ কুঁড়েমি করে বসে থাকার দরুণ আমাকে আরও অনেকগুলি পাতা কপি করতে হবে। এই তো গেল ভারতের সঙ্গে আমার প্রথম সকরুণ পরিচয়!

 “তারপর বহু বৎসর কেটে গেল। ১৮৪১ সালে আমি যখন লিপ্‌সিগের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমার কল্পনা বাস্তবে পরিণত হবার লক্ষণ দেখা গেল। একদিন শুনলাম যে সংস্কৃতচর্চার জন্য নূতন শ্রেণী খোলা হয়েছে এবং প্রোফেসার ব্রক্‌হস্ ভারতীয় সাহিত্য সম্বন্ধে লেকচার দেবেন। আমি রীতিমত সংস্কৃত শিক্ষা আরম্ভ করে দিলাম এবং নলোপাখ্যান, শকুন্তলা ও ঋগ্বেদের কতক অংশ পড়তে শিখবার পর বার্লিন ও তৎপরে প্যারিসে সংস্কৃতচর্চা করতে যাই।

 “সেই সময় ভারতবর্ষ দেখবার ইচ্ছা আমার বড়ই প্রবল হয়েছিল। ইয়োরোপীয় ছাত্রদের যেমন রোম অথবা এথেন্স দেখবার একটা স্পৃহা থাকে, আমারও তেমনি একবার ভারতবর্ষ দর্শন করে কাশীর পবিত্র গঙ্গায় স্নান করবার জন্য ঐকান্তিক ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু তখন তাহা আমার পক্ষে একরূপ অসম্ভব ছিল, কারণ একে ত তখন ভারতবর্ষ ছিল ছয় মাসের পথ, তার উপর অধিক ব্যয়সাধ্য। ভারতের মুখ দর্শন করা জীবনে আমার ভাগ্যে ঘটিল না! যৌবনকালে অর্থাভাবে যাওয়া ঘটে নাই, এবং পরে যদিও আমার ভারতীয় বন্ধুদের দ্বারা বার বার নিমন্ত্রিত হয়েছি কিন্তু একে বৃদ্ধকাল তায় নানা কর্তব্য কর্মে জড়িত হয়ে পড়ে এই সব ছাড়িয়ে যাওয়া দুর্ঘটন হল। তা ছাড়া শুধু ভারতবর্ষ একবার বেড়িয়ে এলেই তো আমার মনস্কামনা পূর্ণ হত না। অন্ততঃ দুই তিন বৎসর সেখানে বাস করতে না পারলে, ভাষাগুলি ভাল করিয়া শিখতে না পারলে এবং দেশীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে