পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
আ মা র বা ল্য ক থা

তথাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এখানেও বিদ্যার্থীগণ কৃতিত্ব দেখাইতে পারিলে উপাধি ও সম্মানের বিবিধ চিহ্ন সকল লাভ করিতে পারিবে। অতএব বাড়ী ফিরিলে তোমার শিক্ষা অসমাপ্ত থাকিবার যে আপত্তি তার গুরুত্ব অনুভব করিবে না।” (21st September 1846)

 ছোটকাকা সেই সময় তাঁর এক বন্ধুকে যে পত্র লেখেন তাহাতে বাড়ী ফিরতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে এইরূপ লিখেছেন—

 “তোমার নিকট মনের কথা খুলিয়া বলিতে কি, আমার এখন দেশে ফিরিবার ইচ্ছা নাই, কি কারণে ঠিক বলিতে পারি না। তুমি জান, আমি সাধারণতঃ ইংরাজ জাতিকে ভালবাসি না, তাদের চালচলন দুচক্ষে দেখিতে পারি না, তাদের সকল বিষয়ে বণিকবৃত্তি আমি মনের সহিত ঘৃণা করি, তথাপি একটা কি আছে যাহা এই সকল বিরুদ্ধভাবকে খণ্ডন করিয়া দিতেছে; ইংলণ্ড ছাড়িয়া কলিকাতার যাইতে কোন মতেই আমার মন উঠিতেছে না।”

 অবশেষে বাধ্য হয়ে তাঁকে বাড়ী ফিরতে হল; যেদিন ফিরে এলেন আমার বেশ মনে পড়ে, ছেলেদের সে মহোৎসবের দিন, কেননা তিনি আসবার সময় তাদের জন্যে নানা রকম খ্যালনা নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলি আমাদের মধ্যে বিতরণ করা হল, আমি একটা কলের ময়ূর পেয়েছিলুম।

 ছোটকাকার কাছে অনেকানেক লোক যাওয়া আসা করত— রমাপ্রসাদ রায়, কিশোরীচাঁদ মিত্র, রাজেন্দ্রলাল মিত্র— পুরাকালের সব খ্যাতনামা পুরুষ— এ সবার মধ্যে তাঁর দুজন মুসলমান বন্ধু ছিল, বজলুল করীম ও বজলুল রহীম। তাঁদের নিয়ে অনেক আমোদ প্রমোদ হত, কখনও বা ইংরাজী মোগলাই মিশ্রিত খানা দেওয়া হত। হিন্দু মুসলমানে যেমন হৃদ্যতা ও মেলামেশা ছিল এখন তা দুর্লভ-দর্শন।

 বিলাত থেকে ফিরে আসবার পরে ছোটকাকা দেখলেন আমাদের কার-ঠাকুর কোম্পানী হাউস তখনো বেশ চল্‌ছে। ভিতরে