পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা

 তখন ১১ই মাঘের উৎসব খুব ধুমধামে সম্পন্ন হত। বিস্তর লােকজনের সমাগম আর রাত্রে এক বৃহৎ বৈঠকী ভােজ। তাতে আমরাও যােগ দিতুম। সেই একদিন যেদিন ছােট বড় কোন প্রভেদ থাকত না। ঐ উপলক্ষে একবার একদল মিলে পলতার বাগানে গিয়ে বড়ই আমােদ আহ্লাদ করা গিয়েছিল; সেদিনের ব্যাপার আমার বেশ মনে পড়ে। ভােজের কর্মকর্তা ছিলেন জগমােহন গাঙ্গুলী। লােকটি বিলক্ষণ হৃষ্টপুষ্ট বলিষ্ঠ—তাঁর ভুঁড়িটিও অতুলনীয়। এমন সৌখীন আমুদে অথচ কর্মিষ্ঠ মানুষ আমি কখনও দেখিনি। খাওয়া, পরা, ওঠা, বসা, প্রত্যেক কার্যে তাঁর কারিগরি প্রকাশ পেত। রান্না বান্না ঘর কন্না—পােষাক সাজ সজ্জা, কারুকার্য, ছুতরের কামারের কাজ—সকল কর্মেই তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। আমরা ছেলের দল তাঁর বড় নেওটা ছিলুম—তাঁর ঘরে গিয়ে খেলা করতুম,—তাঁর কাছে গল্প শুনতুম; তাঁর খুঁটিনাটি অসংখ্য জিনিষের মধ্যে কোনওটা আবদার করে আদায় করতুম,—তাঁর মুখের পান কি মিষ্টি লাগত! তিনি আমাকে উর্দুর প্রথম কেতাব “চাহার দরবেস” শেখাতেন—“সুভান আল্লা ক্যা সানে হ্যায় কি জিসনে এক মট্রি খাকসে ক্যা ক্যা সূরতে আওর মিট্টিকি মূরতে পয়দা কিয়া।”

 তাঁর ভুঁড়িটি আমাদের আদরের সামগ্রী ছিল আর তিনি সকালে যে নাকডাকানী গম্ভীর আওয়াজে দিগ্বিদিক ধ্বনিত করতেন আমরা ভােরে উঠে তাই শুনতে যেতুম। তিনি এক-প্রকার আমাদের বাড়ীর দ্বারপাল ছিলেন। একবার একদল পুলিস ওয়ারেণ্ট নিয়ে এসে বলপূর্বক আমাদের এক গাড়ী টেনে নিয়ে যাবার যােগাড় করছিল—তিনি একলা সেই গাড়ী ধরে রেখে তাদের হটিয়ে দিয়েছিলেন—এ আমার স্বচক্ষে দেখা। আমাদের জগমােহন সেকালের রামমূর্তি।

 সেই গাঙ্গুলীমশায় পলতার বাগানে আমাদের বনভোজনের