পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা

আহার সামগ্রী প্রস্তুত করলেন—সে মাছের ঝোল ভাত আর ভুলব না! আমাদের বাহনগুলি সারি সারি চলেছে—৮|১০টা বোট—আমরা রাত্রিশেষে পলতার বাগানে দলবলে গিয়ে উপনীত হলুম। বোটে আমাদের বিদূষক ছিলেন নবীনবাবু; তাঁর হাস্যপরিহাসে সন্ধ্যাটা খুব আমোদে কেটে গেল। তাঁর বিদ্রুপের বাণ বিশেষরূপে যার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছিল সে লোকটি বে—বাবু। আমি তাকে হাবু বলব। বাবু শব্দের নবীনবাবু এক ছড়া বেঁধেছিলেন তা হাবুবাবুতে বেশ খেটে যায়—

বাববো বহবঃ সন্তি বাবুয়ানা পরায়ণা
হাবুবাবু সমো বাবু ন ভূতো ন ভবিষ্যতি।

 তিনি একজন কফপ্রধান লোক—ঠাণ্ডার ভয়ে গলায় সালের গলাবন্ধ ও গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে মুড়িসুড়ি দিয়ে বসে ঝিমচ্ছেন। বোটের ভিতর একপাশে একটা ছোট কাচের আলমারী ছিল। নবীনবাবু যখন হাবুর প্রতি লক্ষ্য করে গম্ভীর ভাবে প্রস্তাব করলেন যে ঐ কাপড়ের পার্সেলখানা তুলোয় জড়িয়ে এই গ্লাসকেসে পুরে রাখলে ভাল হয়, তখন আমাদের হাসির ফোয়ারা ছুটে গেল। পলতায় নেমে আমরা দলে দলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়লুম। প্রধান দুইদল—একদল চড়ুইভাতী রান্নার চারিদিকে অন্য দলের কেন্দ্র হচ্ছেন—চাটুয্যেমশায়। ভবিষ্যতে তিনি আমাদের একজন পরম আত্মীয়ের মধ্যে গণ্য হলেন। সে সময়ে তাঁর বয়স হয়ত ৪০ পেরিয়ে থাকবে কিন্তু বালকের মত তাঁর ভাবভঙ্গী উৎসাহ কলরব, নৃত্যগীত লীলাখেলায় আমাদের সকলকে মাতিয়ে তুললেন। তাঁর তখনকার গান মনে পড়ছে—

ব্যাটাছেলের (মুখে)[১] কড়ি সর্বলোকে কয়,
সাহসের কার্যে ব্যাটাছেলের পরিচয়।


  1. কথাটির সামান্য একটি অক্ষর বদল করিলাম।