পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৭৭

শুনতে যেতুম। একদিন প্রফেসার আসার আগে আমরা দুজনে একটু চেঁচিয়ে কথা বলছিলুম। মেডিকেল কলেজের একজন ফিরিঙ্গীর বাচ্ছা তাইতে রূঢ়স্বরে বল্লে—“This is not a Bazar, Don’t make such a row”—তারক তাই শুনে ভারী রেগে উঠলেন আর বেশ দুকথা শুনিয়েও দিলেন। তখনই প্রফেসার আসায় তখনকার মত বিবাদটা ঐখানেই থেমে গেল, কিন্তু লেকচার হয়ে যাবার পর ৫/৬ জন ফিরিঙ্গীপুঙ্গব দল বেঁধে তাঁকে আক্রমণ করতে এল, তিনি তাতে ভয় না পেয়ে দেওয়ালের দিকে পিঠ করে দলপতিকে এক ঘুসি বসিয়ে দিলেন। তখন চেলাগণ হাঁ হাঁ করে তাঁর উপর এসে পড়লো, ৪।৫ জনে মিলে তাঁকে কিল চড় বর্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু আমার বন্ধুটি ত কিছুতে দমবার পাত্র নন, তাহলে তিনি আজ দেশপূজ্য তারকনাথ পালিত হতে পারতেন না। তিনি দুই হাতে শত হস্তের বল ধরে তাদের উপর ঘুসি চড় কিল বর্ষণ করতে ছাড়লেন না। খুব মার খেলেন সত্য—কিন্তু মারতেও কিছু মাত্র কসুর করেন নি। আসলে যে তাঁরই জয়লাভ হল একথা মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করতে হবে। কিন্তু তার পরদিন আমাদের প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রেরা এই খবরে ভারী রেগে গেল। রমানাথ নন্দী বলে একজন ছোকরা আমাদের দলের চাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে Awake, arise or be for ever fallen—এই লাইনটা কাগজে লিখে সকলকে উত্তেজিত করতে লাগলো। পর দিন দল বেঁধে মারামারি করতে যাওয়া ঠিক হয়ে গেল। তারক প্রথমটা এতে অমত করলেন, বল্লেন, কার্যক্ষেত্রে তারাও মেরেছে আমিও মেরেছি, শোধবোধ হয়ে গেছে— আবার সেজেগুজে মারামারি করতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। কিন্তু সকলে যখন স্থির করলে যে, না, মারতেই হবে, তখন তিনিও আগুয়ান হয়ে দাঁড়ালেন। তার পর যখন দেখা গেল ফিরিঙ্গি অনেক তখন সর্বাগ্রে আমাদের উত্তেজক মহাশয় রণে ভঙ্গ দিলেন; অনেকেই তার অনুসরণ করলে, আমরা যে দুতিন জন শেষ পর্যন্ত অটল